বৃহস্পতিবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাবে বিশ্বের প্রতিক্রিয়া

আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর করে গাজা দখল করার যে প্রস্তাব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তাতে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ ও গোষ্ঠী।

সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এই অবস্থানকে ‘স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাতি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে গাজা পুনর্গঠন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ফিলিস্তিনিদের গাজায় রেখেই এই প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দেন তারা।

তেহরানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ইরান কোনোভাবেই ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির পক্ষে নয় এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মধ্যপ্রাচ্য সংকটের মীমাংসা কেবল দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ভিত্তিতেই সম্ভব বলে রাশিয়া মনে করে। এটি সেই তত্ত্ব যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবনায় অন্তর্নিহিত রয়েছে। এটি এমন তত্ত্ব যা এই সমস্যায় জড়িত বেশিরভাগ দেশ ভাগ করে নিয়েছে। এটি থেকে এগিয়ে যাই, আমরা এটি সমর্থন করি এবং বিশ্বাস করি যে এটিই একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের প্রত্যাশা- সব পক্ষই যুদ্ধবিরতি ও সংঘাত পরবর্তী শাসনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করবে যাতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনের বিষয়টিকে রাজনৈতিক সমাধানের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা যায়।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, গাজা দখলের পরিকল্পনা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’। ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে করা যেকোনো পরিকল্পনাই আরও বেশি সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।

প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সেক্রেটারি জেনারেল হুসেইন আল-শেইখ বলেন, ফিলিস্তিন নেতৃত্ব পুনরায় নিশ্চিত করছে, আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানই নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তির একমাত্র নিশ্চয়তা।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে; যেখানে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা উভয়ই শান্তিতে থাকতে পারবে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজার বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ। দীর্ঘ সংঘাতের ফলে সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আমরা সবসময় স্পষ্ট করে বলে এসেছি, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। 

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদেরকে অবশ্যই গাজা ও পশ্চিম তীরে নিরাপদে বাস করা ও উন্নয়নের সুযোগ পেতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় তাদের পাশে আমাদের থাকা উচিত।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন বলেছেন, ফ্রান্স আবারও গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে জোর করে বাস্তুচ্যুত করার বিরোধিতা করছে। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটি ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষার ওপর আঘাত এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি বড় বাধা। 

তিনি বলেন, আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার মিশর এবং জর্ডানের পাশাপাশি পুরো অঞ্চলের জন্য অস্থিতিশীলতার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে এই পরিকল্পনা।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, আমি এই বিষয়ে খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই- গাজা ফিলিস্তিনিদের ভূমি এবং তাদের অবশ্যই গাজা থাকার অধিকার আছে। গাজা ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ, যা স্পেন সমর্থন করে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও উন্নতির নিশ্চয়তা দিয়ে গাজা পাশাপাশি অবস্থানে থাকতে হবে।

আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস বলেন, এখানে একটি দিক খুব পরিষ্কার, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দিকেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলি জনগণের নিজ নিজ রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাসের অধিকার রয়েছে, এবং আমাদের লক্ষ্য সেটিই হওয়া উচিত। গাজার জনগণকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার যেকোনো পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরোধী।

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক ও ফিলিস্তিনি-মার্কিন প্রতিনিধি রাশিদা তালিব বলেন, ফিলিস্তিনিরা কোথাও যাবে না। গণহত্যা ও জাতিগত নিধনে অর্থায়নের জন্য কংগ্রেসে দ্বিদলীয় সমর্থনের কারণেই এই প্রেসিডেন্ট কেবল এই ধর্মান্ধ উগ্র মন্তব্য করতে ছড়াতে পেরেছেন। এখনই সময় আমার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান সমর্থনকারী সহকর্মীদের সরব হওয়ার।

বিষয়টি নিয়ে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, গাজার জনগণ এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেবে না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের অবসান নিশ্চিত করা, জনগণকে তাদের ভূমি থেকে সরানো নয়।

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি, অধিকার ও পবিত্র স্থানসমূহ ছেড়ে যাবে না। গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম-সবই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ