ফিনল্যান্ড বাংলাদেশে ডিজিটাল সংযুক্তি, ফাইভ-জি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রিতভা কাউককু রুনদি আজ বুধবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার দপ্তরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকালে ফিনল্যান্ডের এ আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।
বৈঠককালে উভয় পক্ষ ডিজিটাল সংযুক্তি, ফাইভ-জি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়াদি ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
মন্ত্রী বাংলাদেশ ও ফিনল্যান্ড বন্ধু প্রতীম দুটি দেশের বিদ্যমান সম্পর্কের উল্লেখ করে বলেন, ফিনল্যান্ড বাংলাদেশের পরীক্ষিত এক বন্ধু দেশ।
তিনি ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফলতার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্থিতিশীল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়ে জানান।
তিনি ২০০৮ সালে গৃহীত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল ভিত্তি।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে সাত জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউদথ ব্যবহৃত হতো, বর্তমানে তা ৪১০০ জিবিপিএস এ উন্নীত হয়েছে। সে সময় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিলো মাত্র ৮ লাখ। বর্তমানে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ২০৩০ সালে দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইদথের চাহিদা দাঁড়াবে ৩০ হাজার জিবিপিএস বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের চাহিদা মেটানোর পর ভারতের ত্রিপুরায় ব্যান্ডউইদথ রপ্তানি হচ্ছে। সৌদি আরব, ফ্রান্স এবং মালয়েশিয়াতে ব্যান্ডউদথ রপ্তানির বিষয়টিও এ সময় মন্ত্রী উল্লেখ করেন। ভারতের আসাম ও মেঘালয় এবং ভূটানও ব্যান্ডউইদথ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আগামী দিনের বর্ধিত চাহিদা মেটাতে তৃতীয় সাবমেরিন সংযুক্ত হওয়ার কাজ চলছে উল্লেখ করে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের এই অগ্রদূত বলেন, দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ এলাকা ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় এসেছে এমনকি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল, চর, দ্বীপ এবং হাওর অঞ্চল ডিজিটাল সংযুক্তির আওতায় আনা হয়েছে। ডিজিটাল সংযুক্তি গ্রাম পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গৃহীত কর্মসূচি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে পর্ন সাইট ও জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড সমর্থন করে না এ ধরণের কনটেন্ট বন্ধে কার্যকর প্রযুক্তিগত সহায়তা আমাদের প্রয়োজন। এ বিষয়ে ফিনল্যান্ডের কারিগরি সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী ফাইভ-জি প্রযুক্তির বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে সরকার গৃহীত নীতি কর্মসূচি তুলে ধরেন।
বৈঠকে অনাবাসিক ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ডিজিটাল সংযুক্তিসহ ডিজিটাল অবকাঠামো খাতে অর্জিত সফলতার প্রশংসা করেছেন।
তিনি বাংলাদেশ কিভাবে ডিজিটাইজ কর্মসূচি সফল করেছে এ বিষয়ে ফিনল্যান্ডের অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের ডিজিটাল কর্মসূচি বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রদূত রিভা কাউককু বাংলাদেশের সঙ্গে ফিনিশ মাল্টিমিডিয়া টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি নোকিয়ার মধ্যে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন।