শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে দেশের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয়ে দেশের খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বর্তমানে শুধুমাত্র দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকেই কয়লা উত্তোলন করা হয়। আরো ৪টি খনিতে বিপুল পরিমাণ কয়লা থাকলেও দীর্ঘদিনেও তা থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কিন্তু চলমান জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে ব্যয় সাশ্রয়ে এখন ওই খনিগুলো থেকে কয়লা উত্তোলন শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার। সেজন্যই পেট্রোবাংলা দিনাজপুরের দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে দীঘিপাড়া খনিতে কয়লার প্রকৃত মজুদ, উত্তোলন খরচ, সম্ভাব্য পদ্ধতি নিরূপণসহ প্রাথমিক কিছু কাজ শেষ করা হয়েছে। আর এ উদ্যোগের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি কয়লা আমদানির ওপর নির্ভরতাও কমে আসবে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরুর প্রায় ১৭ বছর পর এখন দীঘিপাড়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যদিও বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে কয়লা উত্তোলনের কার্যক্রম এগোয়নি। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত প্রতিরোধ ও বৈশ্বিক উঞ্চায়নে লাগাম টানতে সরকার কয়লাভিত্তিক ১০টি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকেও সরে এসেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গোটা বিশ্বেই জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে উন্নত দেশগুলোও এখন নতুন করে কয়লায় ফিরতে শুরু করেছে। ওই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশও এখন ব্যয় সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে কয়লা উত্তোলনে মনোযোগ দিচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশে এখন ৭৯৬ কোটি ২০ লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে। তার মধ্যে জয়পুরহাটের জামালগঞ্জে সবচেয়ে বেশি কয়লা মজুদ রয়েছে। খনিটিতে ৫৪৫ কোটি টন কয়লা মজুদ রয়েছে। তার বাইরে দিনাজপুরের দীঘিপাড়ায় সাড়ে ৮৬ কোটি, বড়পুকুরিয়ায় ৩৯ কোটি, ফুলবাড়ীতে ৫৭ কোটি ২০ লাখ ও রংপুরের খালাসপীরে সাড়ে ৬৮ কোটি টন কয়লা মজুদ রয়েছে। আর দেশে বর্তমানে ৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। তার সবক’টিতেই জ্বালানি হিসেবে আমদানি করা কয়লা ব্যবহারের সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, রামপালে ১ হাজার ৩২০, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটসহ আরো অনেক ছোট ও মাঝারি ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বিগত ২০১৭ সালে দীঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক তিনটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)। কনসোর্টিয়াম প্রায় ৩ বছর ধরে খনি এলাকায় জরিপ চালিয়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পেট্রোবাংলায় প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে ভূগর্ভস্থ বিশেষ পদ্ধতিতে (সুড়ঙ্গ পদ্ধতি) কয়লা তোলার পক্ষে সুপারিশ করা হয়।

কনসোর্টিয়ামের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে সম্ভাব্য মজুদের পরিমাণ ৭০ দশমিক ৬ কোটি টন। বছরে ৩০ লাখ টন হিসাবে ৩০ বছরে খনিটি থেকে ৯ কোটি টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। ওই কয়লা উত্তোলন করতে ব্যয় হবে প্রতি টনে ১৬০ ডলার।

এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় খনিগুলোয় যে পরিমাণ কয়লার মজুদ রয়েছে তা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। বিশেষ করে বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী ও দীঘিপাড়ার খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে। ওসব কয়লা উত্তোলন করা গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পুরো জ্বালানি আমদানির প্রয়োজন হবে না। বরং স্থানীয় উৎসের ওপর নির্ভরতা বাড়বে। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনও সাশ্রয়ী হবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জানান, কয়লা উত্তোলন নিয়ে সরকার নতুন করে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। তারই অংশ হিসেবে দীঘিপাড়া কয়লা খনি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই খনির কয়লা উত্তোলন-সংক্রান্ত কাজের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করা গেলে কয়লা খনিটি থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়লা উত্তোলন সম্ভব হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ