সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও উচ্চ পর্যায়ে নিতে চান প্রধানমন্ত্রী

টোকিওতে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌজন্য ছবি

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৫০ বছরের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল্যায়ন করে পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

বৃহস্পতিবার সকালে টোকিওর ওয়েস্টিনের সাকুরায় জাপানিজ বিজনেস লিডারদের (সিইও) সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে জাপানের সাথে আমাদের গত পঞ্চাশ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী পঞ্চাশ বছর এবং তার পরেও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আসুন আমাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে পরবর্তীতে উচ্চস্তরে নিয়ে যাই।’

তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে আমাদের দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃষ্টান্তমূলক ফলাফল দেখে আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে জাপানের বৃহত্তর পদযাত্রার প্রত্যাশা আমাদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি জাপানের ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্ব দেন এবং তাদের পরামর্শগুলো নোট করেছেন।

তিনি বলেন, ‘টোকিওতে আমাদের দূতাবাস বাংলাদেশে আপনাদের উদ্যোগকে সহযোগিতা ও সহজতর করতে প্রস্তুত। অনুগ্রহ করে আপনাদের জন্য অপেক্ষারত ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে বাংলাদেশে আসুন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে জাপানি কোম্পানির (আরও জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে) উত্থাপিত বেশ কয়েকটি নিয়ন্ত্রক ও নীতিগত সমস্যা সমাধান করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিজে বাংলাদেশ-জাপান জয়েন্ট পাবলিক- প্রাইভেট ইকোনমিক ইকোনমিক ডায়ালগ (পিপিইডি) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি এবং আমি সন্তুষ্ট যে, পিপিইডি’র ৫ম রাউন্ড ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল জাপানে তার আগমনের ঠিক আগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি অব্যাহত রাখব এবং বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আপনাদের সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করব।’

তিনি উল্লেখ করেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের সবচেয়ে উদার বিদেশি বিনিয়োগ ব্যবস্থা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক খরচ, প্রচুর মানবসম্পদ, উচ্চ ক্রয়ক্ষমতাসহ বিশাল দেশীয় ভোক্তা বাজার এবং ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি অত্যন্ত লাভজনক অবস্থান হিসেবে দ্রুত আবির্ভূত হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার উন্নত করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হতে সচেষ্ট। এ জন্য সারা দেশে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযোগের কেন্দ্র হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্টা করতে পরিকল্পিত অবকাঠামোগত ভিত্তি তৈরি করছে। আজ, আমি আপনাদের খোলামেলা এবং উৎপাদনশীল ধারণাগুলো শুনে খুশি। এটি আমাদের বন্ধুত্বপ্রতীম উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করবে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে ২০১৯ সালে আমি টোকিওতে আপনার সাথে শেষ দেখা করেছিলাম। আমি খুশি তারপর থেকে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অনেক কিছু ঘটেছে।’

বাংলাদেশ ও জাপান গত বছর দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও জাপানের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে বিশেষ করে ২০১৪ সাল থেকে যখন আমরা আমাদের বিস্তৃত অংশীদারিত্ব এবং বিগ-বি উদ্যোগের অধীনে জাপানের প্রতিশ্রুতিতে প্রবেশ করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানি ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশের ব্যবসার এই ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে অনুসরণ করছেন এবং তারা জাপানের বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণ অথবা বাংলাদেশে নতুন ব্যবসা চালু করতে ইতিবাচকভাবে ঝুঁকেছেন।

তিনি বলেন, ‘আজ আপনাদের সাথে আমার আলোচনার মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমার সরকার এবং সব সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসায়িক প্রচেষ্টায় আপনাকে এবং জাপানে আমাদের অন্যান্য বন্ধুদের সাহায্য করতে আগ্রহী।’

বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ