দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও সাইফুদ্দিন আহমেদের বোলিং নৈপুন্যের পর অভিষিক্ত তানজিদ হাসানের অনবদ্য হাফ-সেঞ্চুরির সুবাদে সহজ জয় দিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে হারিয়েছে জিম্বাবুয়েকে। বল হাতে তাসকিন ও সাইফুদ্দিন ৩টি করে উইকেট নেন। ব্যাট হাতে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ বলে অপরাজিত ৬৭ রান করেন তানজিদ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন স্পিনার মাহেদি হাসান। রানের খাতা খোলার আগেই ক্রেইগ আরভিনকে বোল্ড করেন মাহেদি।
আরভিন ফেরার পর পেসার শরিফুল ইসলামের করা তৃতীয় ওভারের প্রথম তিন বলে চার মারেন তিন নম্বরে নামা ব্রায়ান বেনেট। ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন বেনেট। ২২ বলে ২৮ রান যোগ করে উইকেটে সেট হয়ে যান গাম্বি-বেনেট জুটি।
এ অবস্থায় পঞ্চম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই উইকেট তুলে নেন ১৮ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ৪টি চারে ১৪ বলে ১৭ রান করা গাম্বিকে শিকার করেন তিনি।
গাম্বির আউটের পর ষষ্ঠ ওভারে জোড়া উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। মাহেদির করা প্রথম বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের থ্রোতে রান আউট হন ১৫ বলে ৩টি চারে ১৬ রান করা বেনেট।
বেনেটের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। মাহেদির বলে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে লিটনকে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন রাজা। এতে পাওয়ার প্লেতে ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
পাওয়ার প্লে শেষ ওভারের মত সপ্তম ওভারেরও প্রথম দুই বলে উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। পেসার তাসকিন আহমেদের প্রথম বলে বোল্ড হয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন সিন উইলিয়ামস। পরের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রিশাদ হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন রায়ান বার্লও।
পরপর দুই উইকেট নিয়ে হ্যাট্রিকের সম্ভাবনা জাগান তাসকিন। কিন্তু পরের ডেলিভারি তাসকিনকে হতাশ করেন লুক জঙ্গি। তবে পরের ওভারে জঙ্গিকে বিদায় করেন সাইফুদ্দিন। লং অনে তওহিদ হৃদয়কে ক্যাচ দেন ২ রান করা জঙ্গি। অষ্টম ওভারে ৪১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে দ্রুত গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে জিম্বাবুয়ে।
কিন্তু অষ্টম উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন উইকেটরক্ষক ক্লাইভ মানদান্দে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। ১২তম ওভারে স্পিনার রিশাদের বলে লং অফে মাসাকাদজার ক্যাচ ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। ৩ রানে জীবন পেয়ে মানদান্দেকে নিয়ে ১৮তম ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ১শতে নেন মাসাকাদজা।
১৯তম ওভারে মানদান্দেকে বোল্ড করে জুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। আউট হওয়ার আগে ৬টি চারে ৩৯ বলে ৪৩ রান করেন মানন্দান্দে। অষ্টম উইকেটে ৬৫ বলে ৭৫ রান যোগ করেন মানদান্দে ও মাসাকাদজা। টি-টোয়েন্টি ভার্সনে বাংলাদেশের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে জিম্বাবুয়ের এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
শেষ পর্যন্ত পুরো ২০ ওভার খেলে ১২৪ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হন ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৪ রান করা মাসাকাদজা।
বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন ১৪ ও সাইফুদ্দিন ১৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ১৬ রানে ২ উইকেট শিকার করেন মাহেদি।
১২৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। পেসার মুজারাবানির দ্বিতীয় ডেলিভারি ওপেনার লিটন দাসের (১)ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্প উপড়ে ফেলে।
লিটনের বিদায়ে জুটি বাঁধেন অভিষিক্ত তানজিদ হাসান ও অধিনায়ক শান্ত। ৩ ওভার শেষে বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। ২৫ মিনিট পর খেলা শুরু হলে চতুর্থ ওভারে দু’বার জীবন পান তানজিদ। তখন শান্ত ৩ ও ৪ রানে ছিলেন তানজিদ।
এরপর ৭ দশমিক ২ ওভারের পর আবারও বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। পরবর্তীতে আবারও খেলা শুরু হলে দশম ওভারে ছক্কা মারতে গিয়ে উইলিয়ামসকে ক্যাচ দেন ১টি চারে ২৪ বলে ২১ রান করা শান্ত। ৪৮ বলে ৫২ রান যোগ করেন করেন শান্ত-তানজিদ।
অধিনায়ককে হারানোর পর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন তানজিদ। ৩৬ বলে অভিষেক টি-টোয়েন্টিতেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন দেশের হয়ে ১৫টি ওয়ানডে খেলা তানজিদ।
হাফ-সেঞ্চুরির পর ব্যক্তিগত ৫৬ রানে তৃতীয়বারের মত জীবন পান তানজিদ। এরপর ১৫ দশমিক ২ ওভারে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তানজিদ ও হৃদয়। ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৭ বলে অপরাজিত ৬৭ রান করেন তানজিদ। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৮ বলে ঝড়ো ৩৩ রান করেন হৃদয়।
একই ভেন্যুতে আগামী ৫ মে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে।
জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং :
গাম্বি ক তাসকিন ব সাইফুদ্দিন ১৭
আরভিন ব মাহেদি ০
বেনেট রান আউট ১৬
উইলিয়ামস ব তাসকিন ০
রাজা ক লিটন ব মাহেদি ০
মাদান্দে ব তাসকিন ৪৩
বার্ল ক রিশাদ ব তাসকিন ০
জঙ্গি ক হৃদয় ব সাইফুদ্দিন ২
মাসাকাদজা রান আউট (শান্ত) ৩৪
মুজারাবানি ব সাইফুদ্দিন ১
এনগারাভা অপরাজিত ২
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৪, নো-১, ও-৩) ৯
মোট (২০ ওভার, অলআউট) ১২৪
উইকেটের পতন: ১-৮ (আরভিন), ২-৩৬ (গাম্বি), ৩-৩৬ (বেনেট), ৪-৩৬ (রাজা), ৫-৩৮ (উইলিয়ামস), ৬-৩৮ (বার্ল), ৭-৪১ (জঙ্গি), ৮-১১৬ (মাদান্দে), ৯-১১৯ (মুজারাবানি), ১০-১২৪ (মাসাকাদজা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৪-০-৩৭-০,
মাহেদি : ৪-১-১৬-২,
তাসকিন : ৪-০-১৪-৩,
সাইফুদ্দিন : ৪-০-১৫-৩ (ও-২, নো-১),
রিশাদ : ৪-০-৩৭-০ (ও-১)।
বাংলাদেশ ব্যাটিং :
তানজিদ অপরাজিত ৬৭
লিটন ব মুজারাবানি ১
নাজমুল হোসেন ক উইলিয়ামস ব জঙ্গি ২১
হৃদয় অপরাজিত ৩৩
অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-৩) ৪
মোট (১৫.২ ওভার, ২ উইকেট) ১২৬
উইকেটের পতন: ১-৫ (লিটন), ২-৫৭ (নাজমুল)
জিম্বাবুয়ে বোলিং :
এনগারাভা : ৪-০-২৪-০ (ও-১),
মুজারাবানি : ৪-০-৩১-১,
রাজা : ৪-০-৩১-০ (ও-২),
বেনেট : ১-০-১০-০,
জঙ্গি : ১.২-০-১৪-১,
আইন্সলে ১-০-১৫-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : তাসকিন আহমেদ(বাংলাদেশ)।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।