আলু উৎপাদনে দেশের বৃহত্তম জেলা হিসেব পরিচিত জয়পুরহাটে এখন চলছে শেষ পর্যায়ের আলুর পরিচর্যা।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। আলুতে যাতে কোন দাগ বা রোগবালাই না হয় এবং আলুর মান ভালো রাখার জন্য শেষ পর্যায়ের পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। আলুর গাছে স্প্রে করছেন আলু ভালো রাখার জন্য এবং বেশি দিন যাতে সংরক্ষণ করা যায়।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী আগামী ফ্রেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুরোদমে আলু তোলা শুরু হবে । নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় জেলায় এবার ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ।
এ ছাড়া আগাম জাতের আলুর চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। যে আলু বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আলুর ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। সদর উপজেলার কোমরগ্রাম এলাকার কৃষক তানজিলুর রহমান এবার তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করে তিন লক্ষ টাকার আলু বিক্রি করেছেন বলে জানান।
রোপা আমন ধান কাটার পরেই কৃষকরা জমিতে আলুর বীজ রোপণের কাজ শুরু করে। বিশেষ করে আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটার পরেই আগাম জাতের আলু লাগানো হয়ে থাকে জেলা সদরের জামালপুর, পারুলিয়া, বনখুর, পুরানাপৈল ও আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ ও পাঁচবিবি উপজেলার খাসবাট্টা, আয়মারসুলপুর এলাকায়। জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ রোপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
উপজেলা ভিত্তিক আলু চাষের মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ৬ হাজার ৭৬০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় ৭ হাজার ১৫৬ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৮ হাজার ১০৬ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৬১১ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমি। এতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হয়ে থাকে।
জেলায় এবার জাত ভিত্তিক আলু চাষের মধ্যে রয়েছে গ্র্যানুলা জাত ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর, এ্যাষ্টেরিক জাত ১৩ হাজার ১৫৫ হেক্টর, কার্ডিনাল ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর, রোমানা ২ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডায়মন্ড ৪ হাজার ৭১০ হেক্টর, সাদিকা ৪৫০ হেক্টর, লেডিরোজেটা ৪৯৫ হেক্টর, ফেলসিনা ২৮০ হেক্টর, বারি-৮৬ ২০ হেক্টর, কারেজ ৩ হাজার ৯ হেক্টর ও মিউজিকা জাত হচ্ছে ৩ হাজার ৩৫৫ হেক্টর। এ ছাড়াও স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে পাকড়ী জাতের ৩ হাজার ৬৯০ হেক্টর, পাটনাই জাতের ৩০ হেক্টর ও হাগরাই জাতের রয়েছে ২৫ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের ফলে রাসায়নিক সারের কোন প্রকার সংকট নেই জয়পুরহাটে। বিএডিসি উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ সরবরাহ করেছে। জেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণসহ সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন। আবহওয়া ভালো থাকায় এবারও বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা।
জয়পুরহাটের আলু উন্নত মানের হওয়ায় গত বছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯ টি দেশে রপ্তানী করা হয়েছিল। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে।
ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় গ্র্যানুলা, কারেজ, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এষ্টেরিক, কার্ডিনাল, ও রোজেটা জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। জেলার ১৫ টি কোল্ড ষ্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় বলে জানায়, কৃষি বিভাগ।