বুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঘুষ নিয়ে ভূমিহীনকে হয়রানির অভিযোগ ডিসি কাছে আবেদন

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ১৭নং জলিরপাড় ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা, ভূমিহীন, হতদরিদ্র ও ফুটপাতের চা বিক্রেতা বিবেক হালদারের নিকট থেকে সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে জমির বন্দোবস্ত বা ঘুষের টাকা কোনটাই ফেরত না দিয়ে উল্টো ভুক্তভোগী সেই ভূমিহীনকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে জলিরপাড় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এস, এম রকিব উদ্দিন সরদারের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ভূমিহীনদের সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া, ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো সেবা নিতে সরকার নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে তাকে অতিরিক্ত ঘুষ না দিলে কোন কাজ হাসিল না হওয়া সহ ভূমি সেবা প্রত্যাশীদের নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঘুরানোর অভিযোগ এবং সরকারি কর্মচারী হয়েও এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে পক্ষ-বিপক্ষ তৈরীর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীরা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসারের নিকট লিখিত ও মৌখিকভাবে বিষয়টি জানালেও অদৃশ্য কারণে অভিযুক্ত তহশীলদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে জানাগেছে।

জলিরপাড় ইউনিয়নে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিমল হালদারের ছেলে বিবেক হালদার নদীর পূর্ব পাড়ে জেগে ওঠা চরে ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত খেয়াঘাট সংলগ্ন চরে দীর্ঘ ১০/১২ বছর যাবত অস্থায়ী ঘর নির্মাণ ও বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণ করে বসবাস করে আসছিলো সম্প্রতি সিত্রাং ঝড়ে তার ঘরের চালা নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে, সে ঘর উঠিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে গেলে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তাকে ঘর তুলতে বাঁধা দেন এবং বলে তুমি আমার সাথে দেখা করো। তখন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা তাকে ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিস সহ বিভিন্ন দপ্তরে খরচের কথা জানিয়ে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন। বিনিময়ে উক্ত খাস জায়গার দলিল দিবে মর্মে জানায়। পরে ভূমিহীন বিবেক সুদে ঋণ গ্রহন করে অনেক কষ্টে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে চলতি বছরের গত ১১ সেপ্টেম্বর রোববার রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে তহশীল অফিসের উত্তর পাশের কক্ষে বসে ৫০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করে এবং তিনি তা গুনে নেন। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা উক্ত খাসজমির বন্দোবস্ত না দিয়ে বিবেক হালদারকে ঘুরাতে থাকে এবং বলে আরো ৫০ হাজার টাকা দিলে তোকে জায়গা দেওয়া হবে।

শেষমেষ উপায়ন্তর না দেখে বিবেক হালদার গত ২৬ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। যার অনুলিপি মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুকসুদপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বারাবরে প্রেরণ করেন। অসহায়, হতদরিদ্র, নদী ভাঙ্গন কবলিত, ভুমিহীন বিবেকের দাবি প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে দুর্নীতিবাজ ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিচারসহ ভূমিহীন হিসেবে সে যেন উক্ত খাসজমির বন্দোবস্ত পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পান সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।

অভিযুক্ত তহশীলদার এস এম রকিব উদ্দিন সরদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ডিসি অফিসে অভিযোগ দিয়েছে তাতে আমার আরো ভালো হয়েছে। চাকরি আর ভালো লাগে না। তাছাড়া শরীরেও আর কুলায় না। আমিও চাই একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হোক এবং অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। সামনে পদোন্নতি হবে বিধায় আমি অবসরে যাচ্ছি না।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি, আগামী ১১ জানুয়ারি (বুধবার) গণশুনানিতে ভুক্তভোগীকে আমি ডেকে বিস্তারিত জানবো এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ