হাসিনার অভিযোগ, বিদেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চাইছেন ইউনূস। নিজের দলের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন নিয়েও সরব হয়েছেন হাসিনা।
বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময়ে পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই যুবক। ক্রমে সে দেশের গণআন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাইদ। এ বার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সাইদের হত্যা নিয়েই সাফাই দিলেন। তিনি জানালেন, তাঁর পুলিশ সাইদকে খুন করেনি। পাল্টা আঙুল তুললেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে। তিনি আরও দাবি করলেন যে, পুরোটাই ছিল ‘ষড়যন্ত্র’। বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’-এর আগের দিন, রবিবার রাতে একটি ভিডিয়োবার্তায় ফের এ ভাবেই ইউনূসকে নিশানা করলেন হাসিনা। আট মিনিটের সেই ভিডিয়োবার্তায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আরও জানিয়েছেন, দেশকে ধ্বংস করার জন্য বিদেশ থেকে টাকা আনছেন ইউনূস। দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করছেন। এ ভাবে আগুন নিয়ে খেললে পুড়ে মরতে হবে ইউনূসকে। তাঁকে ‘আত্মকেন্দ্রিক’ বলেও দাবি করেছেন শেখ হাসিনা।
গত অগস্টে গণআন্দোলনের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। বাংলাদেশে ছেড়ে সেই থেকে তিনি ভারতে রয়েছেন। দিন কয়েক আগে একটি ভিডিয়োবার্তায় জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ফিরবেন বলেই আল্লা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এ বার নববর্ষের আগের রাতে দেশের ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আবার ইউনূসের দিকে আঙুল তুললেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের চিহ্ন মুছে ফেলা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মানুষ যাতে না ভোলে, সে জন্য সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করেছিলাম। সেগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর জবাব কি দিতে পারবেন ইউনূস?’’ তার পরেই হাসিনার হুঁশিয়ারি, ‘‘আগুন নিয়ে খেললে আপনিও পুড়ে মরবেন।’’
হাসিনার অভিযোগ, বিদেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেই বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চাইছেন ইউনূস। প্রসঙ্গত, অভিযোগ উঠেছিল, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের নেপথ্যে আমেরিকার তৎকালীন জো বাইডেন প্রশাসনের হাত রয়েছে। সেই নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে বসে সেই অভিযোগ খারিজ করেছিলেন। হাসিনা যদিও এই নিয়ে নিজের অভিযোগ থেকে সরতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘সুদখোর, ক্ষমতালোভী, অর্থলোভী, আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তি বিদেশের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছে। দেশকে ধ্বংস করার জন্য বিদেশের টাকা ব্যবহার করেছে। বিএনপি এবং জামায়াত-এ-ইসলামি (রাজনৈতিক) খুন, নির্যাতন করেছে।’’
এর পরে নিজের দলের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতন নিয়েও সরব হয়েছেন হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের নেতাদের কারখানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। হোটেল, হাসপাতালও বন্ধ করা হচ্ছে।
আন্দোলনকারী আবু সাইদের হত্যা নিয়েও কিছু প্রশ্ন তুলেছেন হাসিনা। গত বছর জুলাইয়ে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের সময়ে পুলিশের গুলি লেগে তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। গত ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ রিপোর্ট দিয়ে দাবি করেছিল, ‘ইচ্ছাকৃত বিচার-বহির্ভূত ভাবে খুন’ করা হয়েছে সইদকে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ৭.৬২ এমএম বুলেট ব্যবহার করেছিল পুলিশ। হাসিনার দাবি, ওই দিন পুলিশ শুধুই রবারের গুলি ছুড়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আবু সাইদকে রবারের বুলেট ছোড়া হয়েছিল। ধাতব গুলি ব্যবহার করেনি। তাঁরা যখন পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছিলেন, তখন একটি পাথরে তাঁর মাথা থেঁতলে যায়। পুলিশেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ৭.৬২ এমএম বুলেট কী ভাবে এল? কে মিছিলে বন্দুক নিয়ে এসেছিলেন?’’ হাসিনার দাবি, প্রশাসনের এক কর্তা বিষয়টি উদ্ঘাটনের চেষ্টা করতেই ইউনূস তাঁকে সরিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইউনূস এ রকম করেছেন, কারণ তিনি এই খুনের জন্য দায়ী।’’ সইদের দেহ কবর থেকে তুলে ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর দাবিও তুলেছেন হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই খুনগুলি ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি খুন করিনি, পুলিশ বা আওয়ামী লীগের কর্মীরাও করেননি। পুলিশ নিজেই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল। সবটাই ছিল নির্ভুল পরিকল্পনা।’’থরে তাঁর মাথা থেঁতলে যায়। পুলিশেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ৭.৬২ এমএম বুলেট কী ভাবে এল? কে মিছিলে বন্দুক নিয়ে এসেছিলেন?’’ হাসিনার দাবি, প্রশাসনের এক কর্তা বিষয়টি উদ্ঘাটনের চেষ্টা করতেই ইউনূস তাঁকে সরিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ‘‘ইউনূস এ রকম করেছেন, কারণ তিনি এই খুনের জন্য দায়ী।’’ সইদের দেহ কবর থেকে তুলে ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর দাবিও তুলেছেন হাসিনা। তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই খুনগুলি ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। আমি খুন করিনি, পুলিশ বা আওয়ামী লীগের কর্মীরাও করেননি। পুলিশ নিজেই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল। সবটাই ছিল নির্ভুল পরিকল্পনা।’’
আনন্দবাজার পত্রিকা।