আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজাকার পুত্র অ্যাড. নুরুল ইসলাম শরীফের বিরুদ্ধে ২০ টি হিন্দু পরিবার নির্যাতন ও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার উপজেলা পরিষদ সামনে ল’ চেম্বারে বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনি সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র মাঝি ২০ টি হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি দখলসহ নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাড.এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনি লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, গুলিশাখালী গ্রামের মোঃ মফিজ উদ্দিন শরীফ ছিলেন ১৯৭১ সালের কুখ্যাত রাজাকার। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তিনি এলাকার হিন্দু পরিবারসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষকে প্রকাশ্যে নির্যাতন করেছেন। তার ছেলে অ্যাড. নুরুল ইসলাম মিয়া ২০১১ সালে গুলিশাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। গত ১০ বছর তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্বকালে তিনি খেকুয়ানী স্কুলের মাঠ ভরাট, খেকুয়ানী গাজী বাড়ীর সামনের রাস্তা মেরামত, পুর্ব কলাগাছিয়া মাদ্রাসা মাঠ ভরাট ও কালিবাড়ি মাহেন্দ্র ধোপা বাড়ি সংলগ্ন খালের ব্রীজ নির্মাণ না করে অন্তত ত্রিশ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
নুরুল ইসলাম চেয়ারম্যান থাকাকালিন অবস্থায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। ওই সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা গোছখালী গ্রামের সতিষ চন্দ্র রায়, অনিমা রানী, কেশব রায়, রামা কান্ত, সোনা রায়, রনজিৎ রায় ও মনিন্দ্র চন্দ্র মাঝিসহ ২০ টি হিন্দু পরিবারের পৈত্রিক সম্পত্তি জোরপুর্বক দখল করে চেয়ারম্যান ভোগদখল করছে। তার নির্যাতনে ওই হিন্দু পরিবারগুলো গত ১০ বছর এলাকা ছেড়ে অন্য স্থানে বসবাস করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান আরো বলেন, গোজখালী ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ৫০ টি দোকান ঘর তুলে ঘর প্রতি দুই লক্ষ টাকা করে অন্তত এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পায়রা নদী সংলগ্ন গুলিশাখালী চরের সরকারী খাস জমি নামে বে-নামে বন্দোবস্ত নিয়ে নিজেই ভোগদখল করছেন। এছাড়াও তার কাছে রয়েছে আগ্নেয় অস্ত্র। ওই আগ্নে অস্ত্র নিয়ে তিনি অবাধে চলাফেরা করছেন। এতে সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে রাজাকারপুত্র নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাড, মনি আরো বলেন, নুরুল ইসলাম আমাকে হত্যার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করছেন। যে কোন সময় তিনি আমাকে হত্যা করতে পারেন। তার ভয়ে আমি আতঙ্কিত। তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছে তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মোঃ মোজাম্মেল মাষ্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক মিয়া, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ হারুন অর রশিদ ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী মনিন্দ্র চন্দ্র মাঝি, সতিষ চন্দ্র রায় ও অনিমা রানী প্রমুখ। এ সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত ২০ টি হিন্দু পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাড. নুরুল ইসলাম মিয়া বলেন , আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। আমার মান ক্ষুন্ন করতেই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচ এম মনিরুল ইসলাম মনি সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়ভীতির অভিযোগ এনে সাধারণ ডায়েরী করেছেন। ওই সাধারণ ডায়েরীর তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।