বুধবার, ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গাজায় নিজ বাড়িতে ফিরছেন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি

শরণার্থী শিবিরে মাসের পর মাস ধরে নির্বাসিত থাকার পর উত্তর গাজায় নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন ফিলিস্তিনিরা।

সোমবার লাখ লাখ মানুষকে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী পথ ধরে ফিরতে দেখা যায়। নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে তারা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেও কার্যত পুরো উত্তর গাজাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল, যা এক সময়ের প্রাণবন্ত গাজা সিটিকে ধূলিসাৎ করেছে। তবু ফিলিস্তিনিরা চান ধ্বংসস্তূপ নতুন করে সাজাতে।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও কিছু শর্তে বাস্তুচ্যুতদের পথ আটকে রেখেছিল ইসরায়েল। আগামী শুক্রবারের মধ্যে আরবেল ইয়াহুদসহ তিন জিম্মির মুক্তির শর্তে অবশেষে তারা পথ (নেতজারিত করিডোর) খুলে দেয়। সিএনএনের হাতে আসা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সোমবার ভোরের আলো ফুটতেই উত্তর গাজার উদ্দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের বহর এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে শিশু ও কিছু তল্পিতল্পাও রয়েছে। এ ফেরা উত্তর গাজার বাসিন্দাদের জন্য ছিল অত্যন্ত প্রতীক্ষিত, যদিও ফিরে গিয়ে অনেকেই বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপই দেখতে পাবেন।

গাজা সিটির বাসিন্দা ফাদি আল সিনওয়ার রোববার বলেন, ‘আমরা ৪৭০ দিন ধরে তাঁবুতে বাস করছিলাম। আমাদের বাড়িঘর মিস করেছি।’ আল শাতি শরণার্থী শিবিরে থাকতেন নাদিয়া কাশেম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা এ দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম।’ হামাস এ প্রত্যাবর্তনকে নিজেদের বিজয় বলে বর্ণনা করেছে। এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠনটি বলেছে, ‘এটি আমাদের জনতার বিজয় এবং দখলদার ও তাদের বাস্তুচ্যুতি পরিকল্পনার ব্যর্থতা।’

গত ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলের হামলা চলাকালে একাধিকবার বাস্তুচ্যুতির শিকার হন গাজার বাসিন্দারা। ঘাদা নামের এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, ‘ফেরার আনন্দে তারা আগের রাতে ঘুমোতে পারেননি। রাতেই সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘কমপক্ষে ফিরে তো যেতে পারছি। আশা করি যুদ্ধ শেষ হয়েছে এবং সবকিছু শান্ত হয়েছে।’

তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রধান ধাপে ছয় সপ্তাহ ধরে বন্ধ থাকবে লড়াই। এ সময়ে হামাস ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করবে। এরইমধ্যে সাতজনকে মুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দির মধ্যে অন্তত ৩০০ জনকে মুক্তি দিয়েছে। উত্তর গাজায় যাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, তাদের সবাই নিরস্ত্র। অপর রাস্তা সালাউদ্দিন রোড ধরে গাড়ি বা ভ্যানের মাধ্যমে প্রবেশ করছেন গাজার বাসিন্দারা। এগুলো যাচাইয়ের পর প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করছে মিসরের সামরিক বাহিনী। তারা বিস্ফোরক বা অস্ত্র আছে কিনা, যাচাই করে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫০ জন জিম্মি হন। পরে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে গাজায় নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায়। তারা ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই বাস্তুচ্যুত হন। একাধিকবার তাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো হয়। গত ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে দুর্বিষহ এক নৃশংসতার অবসান ঘটে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ