গাজায় চলতে থাকা ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৩০০’র বেশি মানুষ মারা গেছে বলে বলছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিমান হামলায় গাজার উত্তরাঞ্চল ও এর পার্শ্ববর্তী এলকাগুলো প্রায় মাটির সাথে মিশে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে ইসরায়েলের বিমান হামলায় মারা যাওয়া মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এর মধ্যে শনিবার রাতেই বোমা হামলায় অন্তত ৫৫ জন মারা গেছেন বলে দাবি করছে হামাস।
জাতিসংঘ বলছে, এখন পর্যন্ত গাজার ১৪ লাখের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ জাতিসংঘ নিয়ন্ত্রিত ১৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকছেন।
গাজায় উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ ভবন ইসরায়েলি বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় জাতিসংঘের স্কুল ও হাসপাতালগুলোতে আশ্রয়ও নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তবে সেসব হাসপাতালও এখন খালি করতে বলা হচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, গাজার উত্তরের আল কুদস হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হাসপাতালে বর্তমানে ৪০০ রোগী এবং ১২ হাজার বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন।
গাজা ও ইসরায়েলের মানচিত্র
হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুরু থেকেই হাসপাতাল খালি করার নির্দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছে। ডাক্তারদের একটি গ্রুপ, ফিজিশিয়ান্স ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েল বলছে যে, আল কুদস হাসপাতাল খালি করা যাবে না, সে বিষয়টিতে জোর দিয়ে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্টে তারা একটি আবেদন করবেন।
শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, গাজায় দশ লক্ষেরও বেশি শিশুর জীবন ‘অনিশ্চয়তার মধ্যে’ কাটছে।
অসুস্থ ও আহত শিশুদের গাজা থেকে বের করে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
পাশাপাশি, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের স্বল্পতা ও বিদ্যুৎ সংকট থাকায় সেখানে শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা আরো বড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
পেন্টাগন জানিয়েছে তারা মধ্যপ্রাচ্যে টার্মিনাল হাই আল্টিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি) সিস্টেম পাঠাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। এর সাথে বিশেষ ধরনের বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেমও পাঠানো হচ্ছে ঐ অঞ্চলে।
স্বল্প ও মধ্যম রেঞ্জের বালিস্টিক মিসাইল আঘাত করার কিছুক্ষণ আগে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এই টিএইচএএডি সিস্টেম।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন এই সিস্টেমগুলোর পাশাপাশি ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ অতিরিক্ত সৈন্যও পাঠানো হচ্ছে ঐ এলাকায়। তবে কী সংখ্যক সৈন্য পাঠানো হবে তা নিশ্চিত করেননি মি. লয়েড।
পেন্টাগনের সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলা হয় যে ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও অন্যান্য শক্তির উত্তেজনা বৃদ্ধি’কে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দুই সপ্তাহ আগে হামাস ও ইসরায়েলের বাহিনীর মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলার হার বেড়ে গেছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিসর থেকে গাজার ভেতরে শনিবার খাবার, পানি ও জরুরি ওষুধ নিয়ে ২০টি ট্রাক প্রবেশ করার অনুমতি দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘ আশা করছে রবিবারও আরো কিছু ট্রাক প্রবেশ করার অনুমতি দেবে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথ আশা করছেন যে আরো অন্তত ২০ থেকে ৩০টি ট্রাক গাজার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে।
শনিবার গাজার ভেতরে যে ২০টি ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছিল, সেগুলোতে যে পরিমাণ ত্রাণ ও খাবার গাজায় ঢুকেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বলে মন্তব্য করেছিল জাতিসংঘ।
দুই সপ্তাহ আগে গাজায় পরিপূর্ণ অবরোধ আরোপ করার পর গতকালই প্রথমবারের মত ত্রাণ ও ওষুধ নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে পেরেছে গাজার ভেতরে।
চিকিৎসকদের গাজায় প্রবেশ করতে দিন- রেড ক্রস
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি আহ্বান জানিয়েছে মিসর হয়ে গাজার ভেতরে চিকিৎসকদের যেন প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়।
বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা সারাহ ডেভিস বলেন, “গাজায় এই মুহুর্তে নিয়মিত ভিত্তিতে মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
“একইসাথে, চিকিৎসা কর্মী ও সার্জিকাল টিমও গাজার ভেতরে যেতে দেয়া প্রয়োজন যেন তারা হাসপাতালগুলোতে তৈরি হওয়া চাপ কমাতে পারে।”
তিনি জানান ইসরায়েলি বাহিনীর অবরোধ থাকায় গাজার ভেতরে হাসপাতালগুলো পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানকার চিকিৎসকদের।
অবরোধের কারণে জালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়েও ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে, যার ফলে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।