রবিবার, ২৬শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

গাছ ও বিদ্যুতের খূঁটি রেখেই চলছে অপরিকল্পিত ওয়াক ওয়ে নির্মান

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, চায়ের টেবিল কিংবা সভা-সেমিনারে বহুল বিতর্কের পরও বিশাল সাইজের ১২টি বিদ্যুতের খূঁটি ও ১৩টি গাছ ভেতরে রেখেই চলছে গুরুত্বপূর্ন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অপরিকল্পিত ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজ। জনগুরুত্বপূর্ন একাধিক সড়কে খানা খঁন্দকে নাগরিকদের চলাচলে দুর্ভোগ বিদ্যমান থাকলেও দুই কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রধান সড়কের দু’পাশে অপরিকল্পিত ফুটপাত নির্মানের কাজ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও প্রভাবশালী এক নেতাকে সন্তুষ্ট রাখতে পৌর কর্তৃপক্ষের দেয়া উপহারের এ কাজ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছে না কেউ। তবে অনেকেরই মন্তব্য, ওয়াক ওয়ে নির্মান কাজ থেকে অর্ধেকের বেশী টাকা লাভ হবে প্রভাবশালী ওই নেতার।

সূত্র জানায়, ২৪’র ৫ আগষ্টের পর থেকে প্রভাবশালী নেতার হস্তক্ষেপে পৌর সভার বাস কাউন্টারের ষ্টল বরাদ্দ, হাট-বাজার, খেয়া ঘাট, পাবলিক টয়লেট, বাস ষ্ট্যান্ডের টোল আদায় কার্যক্রম খাস কালেকশনে নেয়ায় বিপুল পরিমান রাজস্ব হারায় পৌরসভা। পানি শাখার বকেয়া পড়ে প্রায় কোটি টাকা। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতান ভাতাদি পরিশোধে শঙ্কা থাকলেও উন্নয়ন কাজ চলছে অপরিকল্পিত ভাবে। একবার উচু ড্রেন করে পুন:রায় পৌরসভার অর্থ গচ্চা দিয়ে আবার তা ভেঙ্গে নতুন করে সড়কের সাথে সমান্তরাল করে নির্মান করা হয়েছে। পৌর শহরের একাধিক সড়কে খানা খঁন্দকে নাকাল হচ্ছে নাগরিকরা। পানি সরবরাহ নিয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই। এছাড়া ট্রেন্ডার প্রক্রিয়ার আগেই বড় মসজিদের ঘাটলা, ড্রেন ভেঙ্গে পুন:নির্মান, একুশে সড়কে নতুন ড্রেন নির্মান, পৌরসভার দেয়ালের বাইরে ৬৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.৫ মিটার প্রস্থ উন্নয়ন কাজ শেষ করার পরে যুক্ত করা হয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়ায়। শুধু একবার নয় পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ প্রায়শ:ই ঘটছে এমন ঘটনা। তবে এসব অভিযোগের প্রমান নেই কাগজে কলমে। স্বচ্ছ করে ফাইলআপ করা হয়েছে উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি।

ওয়াক ওয়ে নিয়ে আরকিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ার ইয়াকুব খান তার প্রতিক্রিয়া ফেসবুকে ব্যক্ত করেন এভাবেই, ’চলমান নির্মিত ফুটপাতের মধ্যে থাকা বিশাল আকারের গাছ গুলো ও বৈদ্যুতিক খূঁটি রেখে কাজ সমাপ্ত করলে সে ফুটপাত দিয়ে আদৌ মানুষ চলাচল করতে পারবে কি? গাছের শিকড় আস্তে আস্তে বৃদ্ধিতে ইটের তৈরী দেয়াল দুর্বল হয়ে ফেটে যাবে, গাছ ঝড়ে বাতাসে নিশ্চয়ই নড়ে। তখনো ব্রিকসের ওয়ালসহ নড়ে চড়ে উঠবে। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত ফুটপাতটি যেনতেন না হয়। সুদুর প্রসারী প্ল্যান মাফিক, গুনগত মান রক্ষায় জবাবদিহিতা ও উন্নয়নে প্রশাসকের সুস্পষ্ট নির্দেশনার ছাপ আমরা আমজনতা দেখতে চাই। অপরিকল্পিত, অব্যবস্থাপনা ও অপচয়ের উন্নয়ন থেকে মুক্তি চাই।’

এদিকে পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ফেরীঘাট থেকে বড় জামে মসজিদ পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে ৭৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ মিটার প্রস্থ ওয়াক ওয়ে নির্মানে দুই কোটি ৬ লাখ টাকার দরপত্র আহবান করে পৌরসভা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাজমুস সাদাত ট্রেডার্স শতকরা ১০ ভাগ লেসে (বারে) ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকায় কাজটি নেয়। ৯জুন’২৫ থেকে উন্নয়ন কাজটি শুরু হয় এবং মেয়াদ শেষ ১লা ডিসেম্বর’২৫।

সূত্রটি আরও জানায়, নির্মানাধীন এ ৭৫০ মিটার ফুটপাতের ভেতরে পাউবো অফিসের সামনে রয়েছে ৫টি বড় সাইজের গাছ, ভূমি অফিসের সামনে ৪টি, থানার সামনে ২টি, বড় মসজিদের সামনে রয়েছে ২টি। এছাড়া ১২টি বড় সাইজের বিদ্যুতের খূঁটি রয়েছে। গাছ কাটা ও বিদ্যুতের খূঁটি অপসারন নিয়ে জটিলতা থাকায় শেষ পর্যন্ত ফুটপাতের ভেতরে রেখেই নির্মান করা হচ্ছে ফুটপাত। পল্লী বিদ্যুতকে খূঁটি অপসারনে চিঠি দিলে তারা ১২ লাখ টাকা তাদের ব্যংক হিসাবে জমা দেয়ার জন্য ফেরত চিঠি দিয়েছে।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, ’পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ ফুটপাত থেকে খূঁটি সরিয়ে নতুন খূঁটি ও কেবল যুক্ত তার প্রতিস্থাপন করার কথা বলেছে। গাছ অপসারন নিয়ে উপজেলা বন কমিটির অনুমোদন জটিলতা সহ পরিবেশ বাদী সংগঠন গুলোর অসম্মতি রয়েছে।’

প্রকৌশলী মশিউর রহমান আরও বলেন,’এ নিয়ে নাগরিকদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। সেখানে গাছ ও খূঁটি রেখে কাজের ব্যাপরে সম্মতি রয়েছে। বর্ষায় সড়কের পানি নিস্কাশনে চামিচ ড্রেন সহ গাছের গোড়ায় ২০০ মিটার প্লাসাইডিং পুঁতে দেয়া হয়েছে যাতে ফুটপাতের ক্ষতি না হয়। তবে তিনি এ কাজ নিয়ে নাগরিকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে কোন মন্তব্য করেন নি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ