বিভিন্ন অপরাধে গত ১০ বছরে ১৮১ জন কর্মকর্তাকে (গ্রেড-১ থেকে ৯) শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে একথা জানান মন্ত্রী। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ১৭৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার মাধ্যমে তদন্ত করা হয়েছে। ১৭৮ জনের মধ্যে আমরা ২২ জনকে গুরুদণ্ড দিয়েছি। ৬৯ জনকে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ৭৭ জনকে।
মন্ত্রী বলেন, কাজ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আসে। এখানে যে শুধু কর্মকর্তারা দায়ী থাকে, সেটা নয়। যার কাজটি পছন্দ হচ্ছে না সেও কিন্তু এখানে ই-রাখে। আমরা সব সময় দেখি তার যে অভিযোগটি সেটির সত্যতা কি আছে? আমাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা (ডিপার্টমেন্টাল প্রসেডিং-ডিপি) চালু করতে হয়।
২০১৪ সালের ২০২৪ পর্যন্ত গত ১০ বছরে গ্রেড-১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৩৫১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এরমধ্যে গুরুদণ্ড পেয়েছেন ৪১ জন, লঘুদণ্ড পেয়েছে ১৪০ জন এবং ১৭০ জনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা চলমান আছে। অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যদি কেউ কোনো কর্মকর্তা সম্পর্কে অভিযোগ দেয়, তা আমরা আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ডিপি বা বিভাগীয় ব্যবস্থা চালু করি। প্রথমে প্রাথমিক তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগের সত্যতা বোঝার চেষ্টা করি। এরপর বিভাগীয় ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর শুনানি হয়, স্পট ভিজিট হয়। আমাদের টিম থাকে।
ফরহাদ হোসেন জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ২৯ শতাংশ ।
জনপ্রশাসনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৮৪ জন সচিবের মধ্যে ১১ জন নারী। অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন ৭৫ জন, যুগ্ম সচিব রয়েছেন ১৬৪ জন, উপ-সচিব রয়েছেন ৩৯৪ জন। সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ৬৫৮ জন।
এছাড়াও ৬৪ জেলার মধ্যে জেলা প্রশাসক হিসেবে ৭ জন নারী এবং ইউএনও হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ১৫১ জন নারী। এসিল্যান্ড হিসেবে ৮৮ জন কর্মরত হয়েছেন। একজন বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন নারী। মোট ২৯ শতাংশ।
ফরহাদ হোসেন বলেন, সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদ ১৯ লাখ ১৫১টি। এরমধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে ১ থেকে ৯ গ্রেডের ৩৫১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। এরমধ্যে গুরুদণ্ড পেয়েছেন ৪১ জন, লঘুদণ্ড পেয়েছেন ১৪০ জন। সবমিলিয়ে শাস্তি পেয়েছেন ১৮১ জন। আর ১৭০ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীতিমালা মানা হচ্ছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করেই পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়। আমাদের এখানে একটা সুশৃঙ্খলা চলে এসেছে। যখন আমরা পদোন্নতি দিই, একটা প্রশ্ন আসে পদের চেয়ে পদোন্নতির সংখ্যা বেশি। আপনারা নিশ্চয় জানেন আমাদের অনেক কিছু খেয়াল করতে হয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হয় বেশ কিছু কর্মকর্তা বিদেশে অধ্যয়নে থাকেন। সরকারের বিভিন্ন স্কলারশিপ রয়েছে সেই স্কলারশিপের অধীনে। বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরতেরর বিষয়েতো রয়েছেই। তারপর একটি বিষয় রয়েছে কিছু সংখ্যক মানুষ থাকে যারা অসুস্থ থাকেন। তো সেটি বাদেই আমাদের কিন্তু করতে হয়।
তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন পদে যখন পদোন্নতি দিচ্ছি তখন কিন্তু যে পদ আছে সেই পদের চেয়ে বেশি দিতে হয় যৌক্তিক কারণে। কিছুদিনের মধ্যেই বা ছয় মাসের মধ্যেই বেশ কিছু কর্মকর্তা পিআরএলে চলে যাচ্ছেন। তারপরে বেশকিছু আমাদের রিজার্ভে রাখতে হয়। কারণ হচ্ছে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে যায়, এই জায়গাটি পূরণ করা।”
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।