ক্ষমতাসীন গণবিরোধী সরকারের পতন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকারকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে দলটি বলেছে, যে কোনো সরকারের দায়িত্ব হলো জনগণের কল্যাণে কাজ করা। কিন্তু এই সরকার প্রত্যেকটা কাজেই দুর্নীতি, অনাচারে জড়িত। তারা বিধি লঙ্ঘন করে মেট্রোরেলের অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় এই সরকারের পতন ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। গত সোমবার দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সভার বিষয়বস্তু তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নজরুল ইসলাম খান ঢাকায় মেট্রোরেলে ভাড়া সর্বনিম্ন ২০ টাকা এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যšø ২০ কিলোমিটারের দুরত্ব ১০০ টাকা নির্ধারণের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এই ভাড়া ভারত ও পাকিস্লানের চেয়ে দুই থেকে পাঁচ গুন বেশি। মেট্রোরেল আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে এই ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বিভিন্ন দেশের মেট্রোরেলের ভাড়ার উদাহরণ দিয়ে জানান, ঢাকা মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া দিল্লী, মুম্বাই, চেন্নাই ও লাহোরের ভাড়ার প্রায় দ্বিগুন এবং কলকাতার ৩ গুন। ঢাকার ২০ কিলো মিটারের ভাড়া কলকাতার ৪ গুন, নয়া দিল্লী, মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের ৩ গুন এবং লাহোরের ভাড়ার চেয়ে সাড়ে ৫ গুন বেশি। কিন্তু মেট্রোরেলের বিধিমালায় বলা হয়েছিলো যে, ঢাকা মহানগরের জনগণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার জন্য, সহজসাধ্য করার জন্য, সুলভ করার জন্য জনগণের টাকায় এই প্রকল্প করা হচ্ছে। জনগণের টাকা ব্যয় করা হয়েছে এবং বার বার বাড়িয়ে অনেক বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এখন ঢাকার বাসভাড়ার চেয়ে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে এই মেট্রোরেলের ভাড়া।
জনগণ অতিরিক্ত টাকা কেনো দেবে প্রশু রেখে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যদি এটা আন্ডার গ্রাউন্ড হতো এর এয়ারকন্ডিশনিং খরচ আরো বেশি হতো। কিন্তু এটা (মেট্রোরেল) আন্ডার গ্রাউন্ড না। এরপরও এই অতিরিক্ত টাকা জনগণের পকেট থেকে যাবে। যেহেতু তারা (সরকার) দুর্নীতি-অনাচার করে অধিক ব্যয় করেছে বলে তা উসুল করার জন্য এটা করেছে। তাদের অপরাধের দায় জনগণ কেনো নেবে?
ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমদানি সংকটের কারণে যখন দেশের দুইটি এলএনজি টার্মিনালের সরবারহ সক্ষমতা নেমেছে ৫০ শতাংশের নিচে তখন সরকারের আরো ২টি নতুন ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মাধ্যমে জ্বালানির মতো কৌশলগত পণ্য নিয়ে দুর্নীতির অপচেষ্টা করার কৌশল নিয়েছে সরকার। এমন গণবিরোধী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার জোর দাবিও জানানো হয়েছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
ড. ইনামুল হককে নাজেহালের নিন্দা জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ২৪ ডিসেম্বর শাহবাগে সরকারের দুর্নীতি-ভোটচুরি-গণবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে গিয়ে বিশিষ্ট পানিবিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী বীরমুক্তিযোদ্ধা ড. ইনামুল হককে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা শারীরিকভাবে নাজেহাল করেছে। অবিলম্বে এর সঙ্গে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে বিএনপি। একই সাথে টকশো উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের বাড়িতে যে পুলিশি অভিযান চালিয়েছে তারও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চগড়ে বিএনপির প্রতিনিধি দল:গত শনিবার সারাদেশে বিএনপির ঘোষিত কর্মসসূচী বাস্তবায়ন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময়ে পঞ্চগড় জেলায় নিহত আব্দুর রশিদ আরেফীনের বাড়িতে দলটির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যাচ্ছেন। আজ বুধবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দল সেখানে নিহতের পরিবারকে সমবেদনা জানাবেন।
