খুলনার বহুল আলোচিত ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙচুরের পর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিল উত্তেজিত ছাত্র-জনতা।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা থেকে ভাঙচুর শুরু হয়। যা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১১টা) ভাঙচুর চলছিল।
এদিকে, ভাঙচুরের দৃশ্য দেখার জন্য ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সেখানে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষও।
অনেককে ওই বাড়ির ইট নিয়ে যেতে দেখা যায়। জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘শেখ বাড়ির ইট বলে কথা, এ ইটের অনেক দাম, তাই বাড়ি নিয়ে যত্ন করে রেখে দেব’। ভাঙচুর চলাকালে মাঝে-মধ্যে ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিল। এ ছাড়া ফাঁকে ফাঁকে মিছিলও করে তারা।
শেখ বাড়ি ভাঙচুরের ফলে নগরীর ময়লাপোতা থেকে পাওয়ার হাউজ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এসময় গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন সদস্যকে দেখা গেলেও কোনো পুলিশ দেখা যায়নি। অবশ্য ছাত্র-জনতার এ ভাঙচুরের সময় শেখ বাড়ির ওপরে ড্রোন উড়তে দেখা গেলেও ঠিক ওই ড্রোন কে বা কারা ব্যবহার করছে সেটি জানা যায়নি।
গত বছর (২০২৪) জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ৪ আগস্ট ভাঙচুর হয় শেখ বাড়ি।
এর আগেই ওই বাড়ির লোকজন সব আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর ৫ আগস্ট কয়েক দফায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয় সাধারণ মানুষও। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে মাস দুয়েক পর শেখ বাড়ির গেটে টিন দিয়ে আটকিয়ে দেয় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। মূলত: শেখ বাড়ি রক্ষার জন্যই এ প্রয়াস।
এর কয়েকদিন পর ওই টিনের গেটে ‘জয় বাংলা’ লিখে দেয় কে বা কারা। পরে অবশ্য সে লেখা মুছে দেওয়া হয়। আলোচিত ওই বাড়ির দেয়ালে বুধবার ভাঙচুরের আগেও বিভিন্ন গ্রাফিতি লেখা ছিল। যা বুলডোজারের আঘাতে হারিয়ে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণার প্রতিবাদেই ছাত্র-জনতা খুলনার আলোচিত এই বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয়।
শেখ হাসিনার পাঁচ চাচাতো ভাই যথাক্রমে শেখ হেলাল উদ্দিন, সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল উদ্দিন, শেখ শাহ জালাল রুবেল ও শেখ বেলাল উদ্দিন। এর মধ্যে শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েল যথাক্রমে বাগেরহাট-২ ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। আরেকজন সংসদ সদস্য ছিলেন শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়। ওই বাড়ি থেকেই মূলত: পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।
এ ছাড়া এ অঞ্চলের সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও ঠিকাদারী কাজ নিয়ন্ত্রিত হতো ওই বাড়ি থেকে। ভাঙচুরের সময় অনেককেই বলতে শোনা গেছে, ‘এই বাড়িতে অনেককেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি, অনেক রাজনৈতিক নেতাকেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, অনেক আমলাকেও এই বাড়িতে হাজিরা দিতে দেখা গেছে’।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, পদোন্নতিও নিয়ন্ত্রিত হতো এই শেখ বাড়ি থেকে। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল শেখ বাড়ি সম্পর্কে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত বছর ৪ ও ৫ আগস্ট এবং সর্বশেষ ছয় মাসের মাথায় বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি)।