দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের গাজীপুরের বাড়িতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮জন আহত হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে গাজীপুর। হামলা চালিয়ে আহত করার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এসব কর্মসূচি পালন করেছে। কর্মসূচিকে ঘিরে জেলা শহরে ছিল থমথমে পরিস্থিতি। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে হামলায় আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ছয় জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত তিনজন ভর্তি আছেন শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর খুনী আ ক ম মোজাম্মেল ও জাহাঙ্গীর এবং আওয়ামী দোসরদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করে অবস্থা কর্মামসূচি, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শনিবার সকাল ১১ টা থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে শহরের রাজবাড়ী সড়কে ও ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ি ময়দানে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে সড়কে অবস্থান নিয়ে গাজীপুরে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সমাবেশে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ জনগণ অংশ নেন। তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং ন্যায়বিচারের দাবি তোলেন। সমাবেশে সমন্বয়ক সারজিস আলম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আজকে রাতের মধ্যে যদি গাজীপুরের ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে আমরা সরকার ও পুলিশের বিপক্ষে অবস্থা নেবো।
সমন্বয়ক সারজিস আলম অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বলেন, আজকের পর থেকে যদি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের কোন ক্যাডার আমার ভাইকে হুমকি দেয় তারপরের দিন তার জায়গা হবে জেলখানায়। খুনি শেখ হাসিনা ও খুনি জাহাঙ্গীরের দোসররা যদি এই গাজীপুরে আবার উত্থান করতে চায়, তাহলে ছাত্র জনতা তাদের ছাড় দিবে না।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের ভাইয়েরা আক্রান্ত শিকার হয়েছে আমাদের প্রশাসন ও পুলিশ কোন প্রকার সহযোগিতা করে নাই ।
![](https://newsflash24bd.com/wp-content/uploads/2025/02/G-3-1024x868.jpg)
এই সমাবেশে যোগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, প্রশাসন সবকিছুর পুরনো রূপ ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে দিয়ে নতুন করে রাষ্ট্রব্যবস্থা সাজাতে বলেছিলাম আমরা। ছয় মাস পরে আমরা দেখতে পেয়েছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছুই করার নাই। আমাদের সংগ্রামী ভাইয়েরা আক্রমণের শিকার হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। প্রশাসন সহযোগিতা করে নাই। সেখানে ফ্যাসিবাদী দোসররা বসে আছে। যদি পুলিশ সহযোগিতা না করে, তাহলে নিজেদের রক্ষা করার দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে।
দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সমাবেশ শেষে রাজবাড়ী মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এর আগে সেখানে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও ক্রাইসিস রেস্পন্স সেল বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান, কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন নেতা অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাসির খান আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল, আওয়ামী দোসরদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, তাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি করেন।
স্থানীয়রা জানান, রাতের আঁধারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ডের দাক্ষিনখান এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হকের দ্বিতল বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি, ওই ভাঙচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে তারা তা প্রতিহত করতে সেখানে যান। এ সময় পরিকল্পিতভাবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগ মাইকে ডাকাতের গুজব ছড়িয়ে জড়ো হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায়। এসময় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের মারধর করে আহত করা হয়। এ সময় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। আহতদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ৬জনকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মসজিদের মাইকে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে, এমন ঘোষণা দেয়ার পর অনেক এলাকাবাসী ওই বাড়িতে জড়ো হয়ে চড়াও হয়।
এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিব বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ছাত্র লীগ ও যুব লীগের নেতা ও কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মারধরের কারণে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিষয়টি জানানোর পর প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এত শিক্ষার্থী আহত হতেন না।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, রাতের ঘটনায় মোট ১৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আনা হয়। তাদের মধ্যে ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, গেল রাত ১০ টার পর হাসপাতালে ১৮ জন আহত শিক্ষার্থী আনা হয়। তাদের মধ্যে ৬ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে তিন শিক্ষার্থী এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল। এছাড়া অন্যরা চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।
এদিকে, শনিবার সকালে হাসপাতালে আহতদের খোঁজ খবর নেন জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন। তিনি এসময় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন এবং সুচিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দেন। এছাড়া র্যাব ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোজাম্মেল হকের বাড়ি পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
এ ব্যাপারে শনিবার বিকেল পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।