সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন পাউবো কর্মকর্তারা

বৈশ্বিক মন্দায় সরকার যখন উন্নয়ন প্রকল্প কাট ছাট করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছেন। ঠিক সেই সময় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ভাঙন রোধে সৈকত রক্ষা প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন পাউবো কর্মকর্তারা। প্রতিবছর অপরিকল্পিত জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ভরাটের কাজের সিডিউলে বাহির থেকে বালি এনে তা জিও টিউব ও জিও ব্যাগে ভারার কথা থাকলেও বাস্তবে সমুদ্র সৈকতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে সৈকতের বালি দিয়েই জিও টিউব ভরা হচ্ছে। আর এ অভিযোগ পেয়ে এবার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে গত চার বছরে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজে সরকার ৮ কোটি টাকা
ব্যয় করলেও পানি উন্নয়ণ বোর্ডের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে সৈকতের বালু কেটে এ কাজ করায় প্রকল্পটি কোন কাজেই আসছে না। আর এ বছরও প্রায় দুই কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সৈকতে যত্রতত্র জিও টিউব ও জিও ব্যাগ স্থাপনের ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে এসব জিও ব্যাগের কারনে সৈকতে নামা পর্যটকরা দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বেশ কয়েকজন পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

কুয়াকাটার স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, বুধবার সকাল থেকে
হঠাৎ করেই দেখি সৈকতের জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন পূর্ব দিকে ৪ টি ড্রেজার মেশিন
বসিযে সৈকতের বালু কেটে জিও টিউবে ভরাট করা হচ্ছে। আমরা নিষেধ করলেও তারা
সৈকতের বালি দিয়েই জিও টিউব ভরাট করে।’

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন,‘ প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলেই পানি উন্নয়ন বোর্ড সৈকত রক্ষার নামে জিও টিউব জিও ব্যাগের অস্থায়ী প্রকল্প হাতে নেয়, যা সৈকতের কোনো কাজেই আসে না উল্টো সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। কুয়াকাটায় দরকার স্থায়ী কোন প্রকল্প নেয়া, যাতে করে সৈকত রক্ষাও হবে সৌন্দর্যও বাড়বে। এখন যা করছে তা শুধু শুধু সরকারের অর্থ অপচয় এবং গুটি কয়েক মানুষ আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘সৈকতের বালু কেটে জিও ব্যাগে ভরছে এমন সংবাদ আমিও পেয়েছি। বর্তমানে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সৈকতের বালু কাটার কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে উত্তাল সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে সাগর পাড়ে। এ কারনে বিগত কয়েক বছর থেকে সমুদ্র সৈকতে বালি ভর্তি জিওব্যাগ এবং জিও টিউব বসাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ৪ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টের দুই পাশে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ বসিয়ে সৈকতের বালি দিয়ে জরুরী ভাবে সৈকত রক্ষার উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার এলাকায় সৈকতের জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ স্থাপন করে, যা কিছুদিন পরেই সমুদ্রে ভেসে যায়। এছাড়া ২০২১ সালে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের দেড় কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ স্থাপন করে। এসব জিও টিউব ও জিও ব্যাগ এখন অদৃশ্যমান। সর্বশেষ ২০২২ সালে সৈকতের দুই কিলোমিটার এলাকায় ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জিওব্যাগ ও জিও টিউব স্থাপন করে, যা এখন পর্যটকদের জন্য মরনফাঁদে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে এসব জিও ব্যাগ সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সমুদ্র সৈকতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি করে পর্যটকদের পথ চলা বিপদ সঙ্কুল করে তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে এবছরও ১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সৈকতের দেড় কিলোমিটার এলাকায় জিও-টিউব ও ৩৭ হাজার জিও ব্যাগ দিয়ে একটি অস্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। আর এসব জিও ব্যাগ ও জিও টিউবে বাহির থেকে বালু এনে তা দিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও তা শুধু কাগজে কলমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের কাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাচারাল’ এর ঠিকাদার মো. লিটন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘ এ অভিযোগ মিথ্যা, আমরা বাহির থেকে বালু এনে কাজ করছি।’ ৪ টি ড্রেজার দিয়ে সৈকত থেকে কারা বালু কাটছে? এমন প্রশ্নের তিনি জবাব দিতে পারেন নি।

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও পটুয়াখালীর জেল প্রশাসক মো.শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সৈকত থেকে বালি তুলে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ভরাট করার বিষয়ে ইতিমধ্যে আমি অবগত হয়েছি। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ