গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীর এখন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির সমাগমে মুখরিত। ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে দলে দলে আসছেন তারা। আগামীকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ইজতেমার প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা।
অবশ্য রেওয়াজ অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার থেকেই ইজতেমা ময়দানে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান, ইবাদত-বন্দেগির নিয়ম-কানুন এসব বিষয়ে বয়ান করা হবে। তাবলীগের যেসব শীর্ষ মুরুব্বী বয়ান করবেন তাদের অনেকেই এরই মধ্যে এসে পৌঁছেছেন। ইজতেমার ৩ দিনে ইমান, আমল, আখলাখসহ তাবলীগের ছয়টি ওসুল বা মূলনীতির ওপর বয়ান করবেন তাদের শীর্ষ মুরব্বিগণ।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা ময়দান ও নদীর অপর পাড়ের একটি সংরক্ষিত খিত্তাসহ ৯১টি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। খিত্তায় খিত্তায় রয়েছে তাবলীগের একজন করে জিম্মাদার। তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারবেন আগতরা। ইজতেমার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্টি রয়েছে মুসল্লিদের মধ্যে।
আর বিদেশীদের জন্য টিনশেডে নির্মিত আরবি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষাভাষীরা আলাদা আলাদা নিবাসে উঠেছেন। এরই মধ্যে ভারত পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, সৌদি আরব কুয়েত, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সহস্রাধিক মুসল্লি এসেছেন ইজতেমা ময়দানে।
অজু গোসলের পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, রান্নাবান্নার ব্যবস্থা, টয়লেট নির্মাণ সহ বিশ্ব ইজতেমায় স্বাগত দেশে বিদেশি মুসল্লিদের জন্য আগের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়ানো হয়েছে এবং তাদের নিরাপত্তায় নানা ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। তিনি বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্যাম্প হামদর্দ ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করে সাংবাদিকদের এসব জানিয়েছেন।
যারা দাঙ্গা হাঙ্গামা করে তারা তাবলীগ জামাতের অনুসারী হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে সব প্রশাসনকে প্রধান মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে ধর্মমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্ব থেকে আগত মুসুল্লিরা যেন তিল পরিমাণ কষ্ট না পায় সেজন্য প্রতিটি দপ্তর, জনপ্রতিনিধিকে নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসায় সরকারি বেসরকারি সহযোগী থাকছে হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াক্ক) বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, ওয়াকফ প্রশাসক আবু সালেহ মো. মহিউদ্দিন খাঁ।
এবার বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সুবিধার্থে সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে অর্ধশতাধিক ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো সহ জরুরী প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থা থাকছে।
এদিকে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
ময়দানের ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকে মোতায়েন করা হয়েছে গোয়েন্দা কর্মী। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্রিফিং দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে র্যাব। ওয়াচ টাওয়ার থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ঠেকাতে সাইবার টিম জোরদার করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইজতেমা এলাকায় ভেজাল খাদ্য দ্রব্য বিক্রি রোধসহ ও শান্তি পূর্ণ পরিবেশে ইজতেমা শেষ করতে জেলা প্রশাসনের ৫টি ভ্রাম্যমাণ দল ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বে থাকবে।
এদিকে গতকাল ইজতেমায় আগত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ধামাউরা গ্রামের ইউনুছ মিয়া (৬০) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চৌহদ্দী গ্রামের জামাল উদ্দিন (৪০) মারা গেছেন।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফারহানা তাসমিন জানিয়েছেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।