পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা কমিটি নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। ছাত্রলীগের পদ পেতে লবিং, তদ্বির, উদ্বেগ, উৎকন্ঠার পর ঝাড়– মিছিল পর্যন্ত হয়েছে পদ বানিজ্যে অভিযুক্ত জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে। কমিটি নিয়ে বিতর্কের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বিতর্কিত ওইসব কমিটি স্থগিত করে দেয়। ফের ১২ মার্চ ২০২৪ জেলা কমিটি তাদের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রের স্থগিত করে দেয়া ওইসব কমিটি বিলুপ্ত করে দেয়। এতে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে ফের উদ্বেগ, উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। পরিচ্ছন্ন ইমেজের ছাত্রলীগের স্থানীয় একাধিক নেতা-কর্মীর বক্তব্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি দিলে জেলার দাবীকৃত টাকার কিস্তি থেকে একমাত্র মুক্তি মিলতে পারে। তবে এসব নিয়ে জেলা কোন মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।
এর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত এক নেতা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করেন জেলা ছাত্রলীগের, যেখানে লেখেন ’টাকা গুলো দয়া করে ফেরত দেন। নইলে গনভবনে যাবো ডকুমেন্ট নিয়া।’ এছাড়া পদ প্রত্যাশীর সাথে জেলা সভাপতির টাকা সংগ্রহ করার নির্দেশনার অডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।
এদিকে ১০ জুলাই ২০২৩ সোমবার রাতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক মো: তানভীর হাসান আরিফ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হাসিবুল হাসানকে সভাপতি ও মো: তারিকুল ইসলাম বাবু তালুকদারকে সম্পাদক করে ছাত্রলীগ কলাপাড়া উপজেলা শাখা কমিটি, রাকিবুল হাসান রাব্বিকে সভাপতি ও রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সম্পাদক করে কলাপাড়া পৌর শাখা কমিটি ও জসিম উদ্দীন জেতুকে সভাপতি ও মিজানুর রহমান মুসাকে সম্পাদক করে সরকারী মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস কলেজ শাখা কমিটি ঘোষনার পর পর রাতেই শহরে টাকা ফেরতের দাবী তুলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে পদ বঞ্চিতরা।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, জেলা ছাত্রলীগের প্রায় কোটি টাকার মিশন সফল করতে ২০ এপ্রিল ২০২৩ উপজেলা ছাত্রলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় শেখ কামাল স্মৃতি কমপ্লেক্স অডিটরিয়ামে। সভা শেষে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে পদ প্রত্যাশীদের জেলায় বায়ো ডাটা জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় পদ নিয়ে দরকষাকষি। জগবন্ধুর মিষ্টি, দধি, কোড়াল মাছ, মধু সহ উপঢৌকন পৌঁছে জেলা নেতাদের বাসায় বাসায়। পরবর্তীতে সভাপতি, সম্পাদক পদের নিলাম ওঠে। এতে পদ প্রত্যাশীরা মোটা অংকের টাকা দিলেও সর্বোচ্চ দর দাতার নাম অন্তর্ভূক্ত হয় জেলা ঘোষিত কমিটিতে।
উপজেলা ছাত্রলীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ’আমার কোন উপার্জন নেই। বাবার জমি বিক্রীর গচ্ছিত ১৫ লক্ষ টাকা জেলা সভাপতি সাইফুল ভাইকে দিয়েছিলাম। আমার চেয়েও দ্বিগুন নিয়ে তারা কমিটি দিয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানোর পর এখনও টাকা ফেরত পাইনি। ’ স্থানীয় ছাত্রলীগের অপর একটি সূত্র জানায়, ’কমিটি পেতে জেলার নেতাদের নিয়ে দোতলা লঞ্চের বিলাসবহুল কক্ষ ভাড়া নিয়ে কয়েকবার ঢাকা আসা যাওয়ায় আমার ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। সেই কমিটি তারা বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন করে আবার যোগাযোগ করতে বলছে।’
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো: সাইফুল ইসলাম গনমাধ্যমকে বলেন, ’এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রমান ছাড়া কোন কিছু বলা যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক তানভীর হাসান আরিফ বলেন, ’কেন্দ্রের নির্দেশে কলাপাড়ার তিনটি কমিটি সদ্য বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। কেন্দ্রের পরবর্তী নির্দেশনা, অনুমতি সাপেক্ষে নতুন কমিটি গঠনের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে।’ ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে আরিফ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।