কর আদায়ে সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন,‘কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করতে প্রতিনিয়ত অটোমেশন করে যাচ্ছি এবং আয়কর আইন-২০২৩ কার্যকর করা হয়েছে। করসেবা সহজ করার লক্ষ্যে নতুন আইন সহজ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ করবর্ষের সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় ট্যাক্স কার্ড বা কর কার্ড এবং সম্মাননা প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ব্যক্তি ৭৬ জন, কোম্পানি ৫৪টি ও অন্যান্য শ্রেণিতে ১১ জন রয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের নিকট থেকে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা গ্রহণ করেন।
কর সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়লে করদাতাদের কর অফিসে আসার আহবান জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন,‘ নতুন কর আইন সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপরও কর সংক্রান্ত কোন সমস্যা দেখা দিলে আপনারা কর অফিসে আসুন। প্রত্যেকটি কর অফিস একটি নির্দিষ্ট দিনে করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। আপনারা কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে সেবা গ্রহণ করুন।’
তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আয়ের তিনটি খাত হলো আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি-রপ্তানি শুল্ক। আমাদের ব্যক্তি পর্যায়ে আয় বাড়ার কারণে আয়কর খাতের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুল্কের উপর নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব আয়ের যে কাঠামো সেটিও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
আয়কর বিভাগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এনবিআরের দেওয়া প্রস্তাব ইতোমধ্যে সরকার অনুমোদন করেছে বলে জানান তিনি।
অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর ভাল কিছু কাজ করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৯ সালে নতুন ভ্যাট আইন চালু হয়েছে। নতুন আয়কর আইন কার্যকর করার পাশাপাশি জাতীয় সংসদে এবছর কাস্টমস আইন পাস হয়েছে। এই তিনটি বড় পদক্ষেপ রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ই-চালান পদ্ধতি তাৎক্ষণিক রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করছে এবং রাজস্ব আদায়ের পর রেকর্ড রাখার ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা ছিলো সেটা দূর করেছে।
রাজস্ব আয় সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া কয়েকটি পদক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অর্থসচিব বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে আমরা ১০ মিলিয়ন করদাতা অর্জন করতে চাই এবং জুন ২০২৪-এ মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয় জিডিপির ০.৫ শতাংশ, পরবর্তী বছর ০.৬ শতাংশ এবং এর পরবর্তী বছরে ০.৭ শতাংশ অর্জর করার লক্ষ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে রাজস্ব আয় হচ্ছে তাতে আমি সম্পূর্ণভাবে আশাবাদী আমরা এসব লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবো। আমি মনে করি আমরা যেভাবে উন্নতি করছি তাতে রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হবে আয়কর।’
ড. খায়েরুজ্জামান বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে সাফল্যের দুটি মাইলফলক আমরা অর্জন করেছি। এর একটি হলো ২০১৫ সালে নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উত্তীর্ণ এবং ২০২৬ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছি। তবে এর একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রথমত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছি, সেটি থাকবে না। একইসাথে রপ্তানিকারকদের যে ভর্তুকি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেটাও বন্ধ করতে হবে। এই দুই কারণে অবধারিতভাবে রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাবে। যার প্রভাব রপ্তানির উপর পড়তে পারে।
তিনি বলেন, তখন রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। সুতরাং এতে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। এই চ্যালেঞ্জ দূর করতে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা এনবিআর গ্রহন করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যেন কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকার আগেভাগেই নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
কর কার্ডধারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও অগ্রাধিকার পাবেন। যেমন বিমানবন্দরে সিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, তারকা হোটেলসহ সব আবাসিক হোটেলে বুকিং, নিজে, স্ত্রী বা স্বামীর ও নির্ভরশীল সন্তানের জন্য সরকারি হাসপাতালের কেবিন, আকাশ-রেল-নৌপথে সরকারি যানবাহনের টিকিট এবং জাতীয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ। এই কর কার্ডের মেয়াদ এক বছর।