রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কঠোর অবস্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানী জুড়ে ব্লকেডে সোমবার অচলাবস্থা তৈরি হয়। বিকালে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর শাহবাগ মোড়, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, চানখাঁরপুল, আগারগাঁও মোড়, গুলিস্তান, জিরো পয়েন্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধের ফলে এসব এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর বড় এলাকা। ফলে অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। এদিকে ৬৪ জেলায় আরও কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এজন্য ৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছে। আজ সারা দেশে প্রতিনিধি বৈঠক করবেন তারা। এদিনও তারা অনলাইনে-অফলাইনে গণসংযোগ করবেন। এরপর বিকালে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

শিক্ষার্থীরা কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলন করছেন। দাবিগুলো হলো-১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা। ২. কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া। ৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধ বিক্ষোভ : সোমবার বেলা ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে লেকচার থিয়েটার ভবন, মাস্টার দা সূর্য সেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসির রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় তারা ‘অবরোধ অবরোধ, শাহবাগ অবরোধ’, দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’, ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ,’ ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের মিছিল শাহবাগ পৌঁছার পর সেখান থেকে কিছু শিক্ষার্থী গিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাওরান বাজার ও মিন্টো রোডের মোড় অবরোধ করেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সায়েন্স ল্যাব অবরোধ করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করেন ইডেন কলেজ ও হোম ইকনোমিক্স কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আর চানখাঁরপুল, ঢাকা মেডিকেল কলেজসংলগ্ন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠার রাস্তা অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্? হলের শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ৮টায় কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সরকারের উদ্দেশে বলেন, ছাত্রদের যদি কোনো ক্ষতি হয় তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। আমরা থাকব রাস্তায় আর আপনারা থাকবেন এসি রুমে। তা হবে না। আপনারা যদি অতি সত্ত্বর আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেন তাহলে বুঝব আমাদের পালস বুঝতে পারেননি।

সার্জিস আলম বলেন, বাংলাদেশ মনে করেছিল ছাত্র-জনতা ঘুমিয়ে গিয়েছে কিন্তু ছাত্র সমাজ ঘুমিয়ে পড়েনি। যখনই প্রয়োজন হবে ছাত্র সমাজ আবারও ২৪-এর মতো জেগে উঠবে। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেন হাইকোর্টের রায় মেনে নিতে। আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই কোটার প্রতি আপনার এত দরদ কেন? আপনি কি কোটার প্রডাক্ট নাকি। আজকে ঢাকা শহর ব্লকেড হয়েছে। এছাড়াও ৪০টি জেলায় ব্লকেড হয়েছে।

আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের ঘোষণার পর আমরা আমাদের আন্দোলন শুরু করেছি। অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দিয়েছি। যত ধরনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া করার করেছি। আমাদের মন্ত্রীদের দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, এখন সরকারকে একদফা দিয়ে দিয়েছি। এখন বল সরকারের কোর্টে। সরকার এবং জনপ্রশাসনকে আমাদের একদফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের যারা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে তাদের যদি কোনো বাধা দেওয়া হয় তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। আমরা এবার সর্বাত্মক ব্লকেডের পরিকল্পনা করছি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ৬৪ জেলায় কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুতির জন্য আজ সারা দেশের প্রতিনিধি বৈঠক এবং অনলাইনে-অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। বিকালে অনলাইন ব্রিফিংয়ে আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করব। তবে ছাত্র ধর্মঘট ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।

৬৫ সদস্যের সমন্বয়ক টিম গঠন : কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে ৬৫ সদস্যের সমন্ব^য়ক টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান চার সমন্বয়কই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই আন্দোলনের সমন্বয়ক টিমের বিষয়ে জানানো হয়। কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে ও স্থায়ী সমাধানের দাবিতে আন্দোলন সফল করতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সমন্বয়ক টিম গঠনের কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

অন্যতম প্রধান চার সমন্বয়ক হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নাহিদ ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সার্জিস আলম ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের আসিফ মাহমুদ। তাদের মধ্যে আসিফ মাহমুদ ছাড়া বাকি তিনজনই ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। আর আসিফ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের।

অন্যতম এই চার সমন্বয়কের সঙ্গে আরও রয়েছেন-মো. মাহিন সরকার, আব্দুল কাদের, আবু বাকের মজুমদার, আব্দুল হান্নান মাসুদ, আদনান আবির, জামান মৃধা, মোহাম্মদ সোহাগ মিয়া, নুসরাত তাবাসসুম (শামসুন্নাহার হল, ঢাবি), রাফিয়া রেহনুমা হৃদি (বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, ঢাবি), মুমতাহীনা মাহজাবিন মোহনা (বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেসা হল, ঢাবি), আনিকা তাহসিনা (রোকেয়া হল, ঢাবি), উমামা ফাতেমা (সুফিয়া কামাল হল, ঢাবি), আলিফ হোসাইন, কাউসার মিয়া, আরিফ সোহেল (জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), রাসেল আহমেদ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), আসাদুল্লাহ আল গালিব (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক (শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও সাবিনা ইয়াসমিন (ইডেন মহিলা কলেজ)।

সহ-সমন্বয়ক হিসাবে আছেন-রিফাত রশিদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, নিশিতা জামান নিহা, রেজোয়ান রিফাত, মেহেদী হাসান, মো. আবু সাঈদ, নুমান আহমাদ চৌধুরী, রিজভি আলম, সানজানা আফিফা অদিতি, ফাহিম শাহরিয়ার, গোলাম রাব্বি, কুররাতুল আন কানিজ, মিনহাজ ফাহিম, মো. মহিউদ্দিন, মেহেদী হাসান মুন্না, সরদার নাদিম সরকার শুভ, রিদুয়ান আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রাইয়ান ফেরদৌস, সাব্বির উদ্দিন রিয়ন, হামজা মাহবুব, এবি যুবায়ের, তানজিলা তামিম হাফসা, বায়েজিদ হাসান, মো. শাহেদ, মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, দিলরুবা আক্তার পলি, ঈশী সরকার, ফাতিহা শারমিন এনি, সামিয়া আক্তার, মাইশা মালিহা, সাদিয়া হাসান লিজা, তারেক আদনান, আফজালুল হক রাকিব (ঢাকা কলেজ), মো. মেহেদী হাসান (কবি নজরুল সরকারি কলেজ), মো. সুজন মিয়া (সরকারি তিতুমীর কলেজ), ইব্রাহিম নিরব (বোরহানউদ্দিন কলেজ), আতিক মুন্সি (নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি), এসএম সুইট (ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়), খান তালাত মাহমুদ রাফি (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) এবং সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি (বিএল কলেজ, খুলনা)।

কোটা আন্দোলনের ৪২ জন সহ-সমন্বয়কদের বেশিরভাগই কে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গুলিস্তানে জিরো পয়েন্ট অবরোধ জবি শিক্ষার্থীদের : বেলা সাড়ে ৩টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের দিকে অগ্রসর হন। এ সময় তাঁতীবাজার মোড়, বংশাল ও ফুলবাড়িয়ায় হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে তিন দফায় পুলিশ তাদের বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন তারা। এ সময় সচিবালয়ের পার্শ্ববর্তী সড়কসহ আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সচিবালয়, মতিঝিল, পুরানা পল্টন ও তাঁতীবাজারগামী যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন।

অনেককে হেঁটে গুলিস্তানের মোড় পার হতে দেখা যায়। এ সময় শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল কোটাবিরোধী নানা স্লোগান, প্রতিবাদী গান ও কবিতা। শিক্ষার্থী মাসুদ রানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের লড়াই হবে কোটার পক্ষের অপশক্তির বিরুদ্ধে। কোটাই যদি রাখতে হয়, তাহলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। পড়াশোনা করে কী হবে?

আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান শেকৃবির শিক্ষার্থীদের : শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন। এ সময় মিরপুর থেকে ফার্মগেট এবং শিশুমেলা থেকে মহাখালী পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ শেষে আগারগাঁও মোড়ে এসে থামে। এ সময় শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

মিরপুরে বিইউপি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন : বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থীরা বিকাল ৪টায় মিরপুর ১২ নম্বর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে মানববন্ধন করেন। এতে কয়েকশ শিক্ষার্থী অংশ নেন।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন। দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে এসে অবরোধ করেন তারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত গান, কবিতা আবৃত্তি, বক্তৃতার মাধ্যমে সেখানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

চট্টগ্রামে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, দুর্ভোগ : বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত নগরীর ষোলশহর রেলপথ অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রেনটি আটকা পড়ে। প্রায় ১ ঘণ্টা পর রেলপথ অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। পরে সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেট মোড় অবরোধ করেন তারা। সেখান থেকে হেঁটে সোয়া ৬টার দিকে নগরীর টাইগার পাস মোড় অবরোধ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে নগরীতে এক রকম অচলাবস্থা তৈরি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।

এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী তালাত মাহমুদ রাফিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ রিজভীর বিরুদ্ধে। রিজভী শাখা ছাত্রলীগের চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) উপগ্রুপের অনুসারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্ম সংগঠনের সদস্য। অভিযোগের বিষয়ে হৃদয় আহমেদ রিজভী বলেন, আমি রাফিকে বিভাগের ছোট ভাই হিসাবে চিনি। সে একদিন এসে পরিচিত হয়েছিল। তবে হুমকির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

রাবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ : বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কৃষি অনুষদ ভবনসংলগ্ন ফ্লাইওভার এলাকার রেললাইন অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে পড়ে। পাঁচটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে ও গন্তব্যের উদ্দেশে ছাড়তে পারেনি।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন-পদ্মা, সাগরদাড়ি, কপোতাক্ষ, ধূমকেতু ও বরেন্দ্র এক্সপ্রেসের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে জড়ো হন। সেখান থেকে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল ও সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রেললাইনে যান শিক্ষার্থীরা।

রংপুরে সড়ক অবরোধ : বেলা ১১টা থেকে মহানগরীর মডার্ন মোড়ে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে সারা দেশের সঙ্গে রংপুর অঞ্চলের ছয় জেলার (রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়) সড়ক যোগাযোগ ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। অবরোধে অংশ নেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর কলেজ, বেগম রোকেয়া কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় তারা ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই, কোনঠে বাহে জাগো সবাই’, ‘আমার দেশ আমার মা, কোটা বৈষম্য মানব না’সহ নানা স্লোগান দেন।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ : বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। এতে মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এরআগে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়কে আসেন তারা। এ সময় তারা প্রতিবাদস্বরূপ বই পড়েন এবং কবিতা আবৃত্তি করেন।

রেলপথ অবরোধ বাকৃবি শিক্ষার্থীদের : ময়মনসিংহে দুপুরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা আব্দুল জব্বার মোড়ে রেলপথ অবরোধ করেন। এ সময় ঢাকা থেকে জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর দেড়টা থেকে বেলা ৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ট্রেনটি আটকে রাখেন তারা। পরে শিক্ষার্থীরা মুক্তমঞ্চে এসে মানববন্ধন এবং মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ : ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর কোটা বাদে বৈষম্যমূলক সব কোটা বাতিলের দাবি জানান। এতে মহাসড়কে অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

নোয়াখালীতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ : বেলা ১১টায় নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে প্রথমে মানববন্ধন ও পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন প্রতিবাদ সংবলিত ফেস্টুন ও কোটাবিরোধী স্লোগান দেন।

জামালপুরে মানববন্ধন-বিক্ষোভ : দুপুরে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ ক্যাম্পাসে জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

গাইবান্ধায় বিক্ষোভ সমাবেশ : শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। এতে ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সেলিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জেলা সভাপতি পরমানন্দ দাস, সাধারণ সম্পাদক রাহেলা সিদ্দিকা, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক মৈত্রেয় হাসান জৈয়িতা প্রমুখ।

খুলনায় বিশ্বরোড অবরোধ : বেলা সাড়ে ৩টায় জেলার সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড মোড় অবরোধ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর গল্লামারী মোড় হয়ে বিশ্বরোড মোড়ে আসেন তারা। এতে কিছু সময়ের জন্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ঢাকা ও খুলনাগামী যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি আটকে পড়ে। প্রায় ৬ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ