বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল : নৌপ্রতিমন্ত্রী

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। পৃথিবীর কোন ভাষণের সাথেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তুলনা নাই। রেসকোর্স মাঠের বাইরেও উন্মাদনা ছিল।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক ডাক্তার মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র চন্দ, মেজর হাফিজুর রহমান (অব:), জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিকুল করিম সাবু।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু অক্ষরে অক্ষরে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। ৭ মার্চের মঞ্চ একদিনে তৈরি হয়নি। হাজার বছরের বঞ্চনার মঞ্চ ৭ই মার্চ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এত শক্তিশালী যে, সামরিক জান্তারা এ ভাষণ বাজানোর জন্য মানুষকে হত্যা করেছিল, নির্যাতন করেছিল, নিপীড়ন চালিয়েছিল। মাইক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল। কাউকে মাইক ভাড়া দেয়া হতো না।

কিভাবে একটি জাতি মুক্তি লাভ করতে পারে-তার নির্দেশনা এ ভাষণে রয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ভাষণ শুধু শুনলে হবে না, প্রতিটি শব্দ পড়তে হবে, এটার ভিতরে যেতে হবে, গভীরে যেতে হবে- কত বড় মহাকাব্য রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাদ দিয়ে, বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাদ দিয়ে, বাংলাদেশ এগোতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির কথাটা, মুক্তির পথ- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, অতীতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যত বেশি ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে, দেশ তত বেশি পিছিয়ে গেছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা তৈরি করা হয়েছিল, সব থেকে আগে সে চেতনার উপর আঘাত করা হয়েছে। আর এ চেতনার উপর আঘাত হয়েছিল বলে এদেশে সন্ত্রাস দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে এবং জঙ্গিবাদের হাতে, এদেশ মৌলবাদীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল।

তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, বঙ্গবন্ধুর দেয়া নির্দেশনা, সে লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে চাই। এর জন্য আমাদের প্রথম দায়িত্ব সাম্প্রদায়িকতার বিষ উপড়ে ফেলা। এটাকে দমন নয়; যতক্ষণ পর্যন্ত নির্মূল করতে না পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো না বলে প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক সংকট আছে; চ্যালেঞ্জ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস ও শক্তিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অর্জন ও সম্পদ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য এ সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, ভাষণটিতে ১ হাজার ১০০-এর বেশি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ১৮ মিনিটের এ ভাষণের প্রতিটি লাইন বিশ্লেষণ করলে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠন সম্ভব। তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেওয়া বাংলাদেশকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু জিডিপির দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, এ ভাষণ থেকেই স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। স্বাধীনের পরে ছিল ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। স্বাধীনতার পরই আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি কাজ করেছেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে জিডিপিতে পাকিস্তান ও ভারতকে পেছনে ফেলেছি। বর্তমানে একটি সিন্ডিকেট দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেছে। জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি পেয়েছি চোরের খনি’। তিনি এ চোরদের থেকে মানুষকে মুক্তি করতে চেয়েছেন। এখনও এ চোরেরা আমাদের পেছনে টেনে ধরছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা সমাজের দুর্নীতি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি চালু করেছেন।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ এখন কোটি মানুষের ভাষণে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছাড়া পৃথিবীর কোনো ভাষণ জাতি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়নি। এটি ছিল একমাত্র অলিখিত ভাষণ। এ ভাষণ শিক্ষা মন্ত্রণায়ের উদ্যোগে বাধ্যতামূলক নবম শ্রেণিতে যুক্ত করতে হবে। এসএসসি পর্যায়ে এ থেকে প্রশ্ন রাখতে হবে। ভালোবেসে শিক্ষার্থীদের এ ভাষণ পড়তে হবে। এখন তারা শুধু মুখে মুখে এ নিয়ে আলোচনা করে। ভাষণটির তাৎপর্য সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ভাষণে তিনি বঞ্চনা, ইতিহাস, প্রত্যাশার কথা নিয়ে আসেন। একইসঙ্গে জনমনের কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে চতুরতা অবলম্বন করে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ৭১-এর সেই ভাষণ বিভিন্ন দিক থেকেই বিশ্লেষণ করা যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার’। এর মধ্য দিয়ে তিনি সব জাতি, ধর্ম ও বর্ণের লোকদের এক করেছিলেন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে প্রস্তুত করতে তিনি এ ডাক দিয়েছিলেন। এরপর তিনি বলেছেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এর মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধীনতার ও মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। এ মুক্তি অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, শেখ মুজিবের সেদিনের ভাষণ জনমনে দাগ কেটেছিল। পৃথিবীর অন্যান্য শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে এটি অন্যতম স্থান করে নিয়েছে।

সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সভায় আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম সাবু ও বঙ্গবন্ধু গবেষক মেজর হাফিজুর রহমান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ