রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

এবার গাজীপুরে শেখ হাসিনা-কাদের-রাঙ্গার নামে হত্যা মামলা

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া রংপুরের পীরগাছা এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় রাজমিস্ত্রি মো. মঞ্জু মিয়া (৪৩) হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটির বাদী রংপুর জেলার পীরগাছা থানার জুয়ান এলাকার বাসিন্দা গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন বড়বাড়ী এলাকায় ভাড়ায় বসবাসরত মো. ইনছার আলী (৬৮)।

মামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রংপুরের আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাদেরও আসামি করা হয়েছে।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৬), রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য টিপু মুন্সি (৭৪), সাবেক মন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা (৭৩), গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান (৭০), সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল (৪৬), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন (৫৮), ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাদ্দাম (৩৫) ও সাধারণ সম্পাদক ইনান (৩৪)। মামলায় শেখ হাসিনাসহ প্রথম ১৯ জনকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলায় আরও ৫০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশের গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জিয়াউল জানান, মামলাটি গত ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে রুজু করা হয়েছে। মামলায় মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রসহ বেআইনী জনতাবদ্ধে মারপিট করে গুরুতর জখম করাসহ গুলি করে মানুষ খুন করা ও হুকুম দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২০ জুলাই দুপুর অনুমান ১২টার দিকে নিহত মঞ্জু মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে গাছা থানাধীন বড়বাড়ী বাজারের সামনের রাস্তায় সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। সেখানে আসামিদের জ্ঞাত ও অজ্ঞাত উশৃঙ্খল আসামিদের (কেন্দ্রীয় নেতাদের) নির্দেশ অনুযায়ী বন্দুক, পিস্তল, লাঠি, লোহার রড, রামদা, ছেন, চাপাতি, কোপা ইত্যাদি বিভিন্ন মারাত্মক দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনী জনতাবদ্ধে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। মারপিট করে মো. মঞ্জু মিয়াসহ ২৫-৩০ জন আন্দোলনকারীকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলাফুলা ও কাটা রক্তাক্ত জখম করে।

এক পর্যায়ে উল্লেখিত আসামির নির্দেশে ৬নং আসামি মো. আজমত উল্লা খান ও ৭নং আসামি জাহিদ আহসান রাসেল সশরীরে উপস্থিত থেকে ও তাদের হুকুমে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ পিস্তল ও বন্দুকধারী এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত নামীয় আসামিরা ছাত্র জনতাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। ওই সময় আসামিদের ছোড়া গুলিতে ঘটনার দিন দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মো. মঞ্জু মিয়ার (৪৩) পেটের বাম পাশে গুলি ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে তিনি গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

ঘটনার বিষয়ে সংবাদে পেয়ে মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী মোসা. রহিমা বেগম (৩১) উপস্থিত ছাত্র-জনতার সহায়তায় চিকিৎসার জন্য দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় মঞ্জু মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার সময় মঞ্জু মিয়া মৃত্যুবরণ করে।


বাদী আরও জানান, মো. মঞ্জুর মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলার পীরাগাছা থানার জুয়ান গ্রামে দাফন সম্পন্ন করার পর দেশব্যাপী চলমান অস্থিরতা বিরাজমান অবস্থায় থানার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সুষ্ঠু ও সঠিক এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিবাদীর নাম ঠিকানা সংগ্রহের করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ