তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ১৯৭১ সালে ভারত শুধু তাদের সীমান্ত খুলে দেয়নি, ঘরের দুয়ারই খুলে দেয়নি, মনের দুয়ারও খুলে দিয়েছিল। নিজে না খেয়ে বা কম খেয়ে এ দেশ থেকে যাওয়া শরণার্থীদের তারা খাইয়েছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন সেটি আমাদের দেশের মানুষ মনে রাখবে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে তথ্য ভবন মিলনায়তনে ৬ থেকে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফররত ৩৪ ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এবং উর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দুই দেশের মৈত্রী রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশিরা, এদেশের সমস্ত নাগরিক, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব তাদের ভূমিকার জন্য।’
কলকাতার ২৫ জন ও আসামের ৯জন সাংবাদিকের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের কিছু অংশ ঘুরে দেখেছেন এবং নিশ্চয়ই বাংলাদেশে যারা ১২-১৪ বছর আগে এসেছিলেন, তারা পার্থক্যটা বুঝতে পেরেছেন। এমন কি দু’বছর আগেও যিনি এসেছিলেন, দু’বছর পরেও অনেক পার্থক্য দৃশ্যমান। আমাদের দেশের মানুষ এই পার্থক্যটা খুব একটা বুঝতে পারে না। কারণ সবাই উন্নয়নের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু যে ছেলে ১৪ বছর আগে বিদেশ গেছেন, সে এসে তার শহর চিনতে পারে না, তার গ্রামও চিনতে পারে না -এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশকে সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে সামাজিক সম্প্রীতি, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রীতি, বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি -এটি অনেক দেশের জন্য উদাহরণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন- ধর্ম যার যার উৎসব সবার, ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। আমরা সেটিই লালন করি, বুকে ধারণ করি। সে কারণে আমাদের দেশে প্রতি বছর উৎসবের মাত্রা বাড়ে। গত বছর দুর্গাপূজা মন্ডপের সংখ্যা তার আগের বছরের চেয়ে কয়েকশ’ বেশি ছিল। সরকার সে ক্ষেত্রে সহায়তা করে নানাভাবে।’
পরিতাপের সুরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের দেশে আছে, অন্যান্য দেশেও আছে। দু:খজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে সেই অপশক্তির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে বিএনপি। আপনারা দেখুন, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প যখন যেখানেই ছড়ানো হয়েছে, সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিকে বিস্তৃত করেছে বিএনপি ঘরানার লোকজন, তাদের সমর্থক, তাদের নেতারা, তাদের কর্মীরা। সমস্ত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি জোটের সদস্য।’
‘এটি আমাদের জন্য দু:খজনক কারণ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে বাঙালিদের জন্য একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র করার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়, এখানে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান থাকতে পারে না’ দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন হাছান মাহমুদ।
কোনো গুজব যেন সাম্প্রদায়িক বা সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে না পারে সে জন্য সকল সাংবাদিকের সহযোগিতা কামনা করেন ড. হাছান। তিনি বলেন, ‘দেখা গেল ভারতের কোনো একটি অনলাইন ভিত্তিহীন একটি সংবাদ করে দিল, সেটি নিয়ে ভারতেও মাতামাতি শুরু হলো আবার সেটা কপি করে আমাদের এখানে কিছু অনলাইন, কিছু পোর্টাল গুজব ছড়াল। এগুলোর কারণে সমাজে মাঝে মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ব্যাপারে আমাদের উভয় দেশের সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান এ সময় ভারতীয় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তিনি ভারতের সহায়তা কামনা করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই এখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রয়েছে জানান এবং অর্থনীতির প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বলে দেয় এ দেশ থেকে অর্থনৈতিক কারণে কোনো প্রতিবেশী দেশে অনুপ্রবেশ ঘটার কোনো কারণ নেই।
ভারতীয় সাংবাদিকদের পক্ষে কলকাতা প্রেস ক্লাব সভাপতি স্নেহাশিস সুর বলেন,
‘আজকের ১০ জানুয়ারি দিনটা শুধু মাত্র বাংলাদেশের কাছে বিশেষ দিন নয়, এটা ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের কাছে একটা বিশেষ দিন। কারামুক্তির পর এই দিনেই স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রধান রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মাটিতেও প্রথম পা দিয়েছিলেন। আর এই দিনে বাংলাদেশের মাটিতে থাকতে পেরেছি সে জন্য আমরা অত্যন্ত গৌরবান্বিত।’
এবং এ দিনের ইতিহাসটা আবার মনে করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে সময় বঙ্গবন্ধু জীবিত আছেন কি না দীর্ঘদিন ধরে এটাও একটা সংশয় ছিল। আমরা আমাদের বাবা-মা’র কাছে সেটাই জিজ্ঞেস করতাম।’
আসামের আঞ্চলিক সংবাদ টিভি চ্যানেল প্রাগ নিউজে’র প্রধান সম্পাদক প্রশান্ত রাজগুরু তার বক্তব্যে তাদের আমন্ত্রণ করে একটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দেখাবার জন্য তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার ভ্রমণ আমাদের নয়ন খুলে দিয়েছে।’