সোনারগাঁ উপজেলাধীন মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নকে কেন্দ্র করে চরমভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নৌকা জয়ের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল নেতাকর্মীরা, যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একটি অংশের কূটচালে নৌকার পরাজয় হয়েছে নির্বাচনে। এমতাবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে বড় পরিসরে ভাঙনের সৃষ্ট হয়েছে বলে জানা যায়।
দলীয় সূত্র বলছে, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, ইঞ্জিনিয়ার মাসুমসহ একটি অংশ কাজ করেছিল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও মোগড়াপাড়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোহাগ রনির পক্ষে। অপরদিকে, সাবেক সংসদ সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুসহ বৃহৎ একটি অংশ গোপনে কাজ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবুর পক্ষে।
গত ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চান আরিফ মাসুদ বাবু। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনিত হোন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সোহাগ রনি। ১৩ মে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে সোহাগ রনিকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়। ক্ষোভে সংবাদ সম্মেলন করে আরিফ মাসুদ বাবু উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। সে সময় সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী হাসনাত পরিবারের সন্তান আরিফ মাসুদ বাবু নৌকার বিরোধীতা করে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। নৌকা পরিবারের সন্তান হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচনে বাবুর অংশ নেয়াটাকে স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি তৃণমূল আ’লীগ। যদিও উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতা বাবুকে গোপনে সমর্থন জানায়। এমনকি বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে, ঘরোয়া মিটিং করে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট চায় ওই সকল নেতারা। যার কয়েকটি অডিও রেকর্ড এরইমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
একটি অডিও বার্তায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে সরাসরি বলতে শোনা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান বাবু ভাই ভালো মানুষ। আপনারা দয়া করে তাকে ভোট দেবেন। আর আমাদের যে প্রার্থী সে নৌকা প্রতীক পাওয়ার আগে আমাকেই মামলায় জড়িয়েছে। আর যদি নির্বাচনে জিততে পারে, তাহলে কি করবে সেটা আপনারাই ভালো জানেন।
পরবর্তীতে ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় মোগড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১১৩৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী শাহ মো. সোহাগ রনি। যদিও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তার অভিযোগ ছিল, স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ সরাসরি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। যার কারণেই মূলত নৌকার পরাজয় দেখেছে মোগড়াপাড়াবাসী। অন্যথায় কোনভাবেই নৌকার ভরাডুবি হওয়ার কথা ছিল না।
অন্যদিকে, ২৮ জুন রাতে মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের এক কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত বলেন- নির্বাচনের আগে অনেক নাটক হয়েছে। আমরা যেহুতু নেতৃত্ব দেই তাই আমরা চুপ ছিলাম। দু:খজনক নির্বাচনের পর কিছু ব্যক্তি এমন নাটক সাঁজানোর চেষ্টা করছে ‘আওয়ামী লীগ দ্বারা আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে’। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা। আর জনগনের মনে কি ছিল সেটা তারা ভোটের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
কায়সার হাসনাত আরও বলেন, শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্যে। সারাদেশের মতো নেত্রী নির্দেশন দিয়েছেন সোনাগাঁয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে কমিটি করতে হবে। সেই লক্ষেই আমরা কাজ করছি। কিছু ব্যক্তি এসি ছেড়ে লাইভ দেয় আওয়ামী লীগ নাকি আওয়ামী লীগ ধ্বংস করছে। তাদের নিয়ে কথা বলতে চাই না।
সবমিলিয়ে জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নিজেদের মধ্যে কোন্দল বৃদ্ধি হতে থাকলে একপর্যায়ে মেরুদন্ডহীন হয়ে পরার শঙ্কা তৈরি হবে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মাঝে। কেননা, বৃহৎ দু’টি অংশ এমনিতেই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে কোন্দল আরও বৃদ্ধির প্রবণতা তৈরি হবে। কেননা, সকলেই চায় নেতৃত্ব বা ক্ষমতা। এক নেতার ছায়াতলে না থাকতে পারলে পরে ঘরে ঘরে নেতা তৈরি হবে।