শনিবার, ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমাদের অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও সাংবিধানিক নীতির ওপর নিহিত: সেনাপ্রধান

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং জাতিসংঘ মিশনে ধারাবাহিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি বজায় রাখতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং আমাদের সাংবিধানিক নীতির ওপর নিহিত। আমরা সব সময় বিশ্বশান্তির পক্ষে থাকব।’

বৃহস্পতিবার ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে ঢাকায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে ১৬৮ জন বীর সৈনিক ও পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁদের এই আত্মত্যাগ জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রাখবে।’

সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ শান্তিরক্ষী হিসেবে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত।

তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আজ একটি স্বীকৃত এবং অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য নাম। জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকেই বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছে।

তিনি জানান, বর্তমানে শান্তি রক্ষা কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চার হাজার ৮৮০ জন, নৌবাহিনীর ৩৪৩ জন, বিমানবাহিনীর ৩৯৬ জন এবং পুলিশ বাহিনীর ১৯৯ জনসহ মোট পাঁচ হাজার ১১৮ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত আছেন।

তিনি বলেন, ‘পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি আমাদের নারী শান্তিরক্ষীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। অদ্যাবধি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের মোট তিন হাজার ৬৪৫ জন নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৪৪৪ জন নারী সদস্য শান্তিরক্ষার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত রয়েছেন।


জেনারেল ওয়াকার বলেন, ‘আমাদের শান্তিরক্ষীরা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিক মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার প্রমাণ রেখে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত।

সেনাপ্রধান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক প্রশংসনীয় কাজের বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশি একটি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট আর্ন রোলে কঙ্গো মিশনে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি পেরুবিয়ান আর্মিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজেদের প্রযুক্তিতে তৈরি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়কারী যান অনুদান হিসেবে হস্তান্তর করেছে। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে সেনাবাহিনীর অনুদান ও তত্ত্বাবধানে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা স্থানীয় জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই ক্লিনিকটি যেদিন উদ্বোধন করা হয়, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মাননীয় রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন।

আমিও ছিলাম। আমরা একই সঙ্গে ক্লিনিকটি উদ্বোধন করি। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের জনগণ এবং সে দেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমাদের কাজে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমরা এভাবে সেখানে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

কূটনীতিক এবং বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, জাতিসংঘের শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বানে সাড়া দেওয়া অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। আমাদের অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং আমাদের সাংবিধানিক নীতির ওপর নিহিত। আমরা সব সময় বিশ্বশান্তির পক্ষে থাকব।’

দিবস উদযাপন : শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরুর পর শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকালীন শাহাদাতবরণকারীদের জন্য এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিসেস গুইন লুইস। আরো বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠতম শান্তিরক্ষী হিসেবে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বক্তব্য দেন। এ ছাড়া অর্থ উপদেষ্টাও বক্তব্য দেন এবং বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ভিটিসির মাধ্যমে মতবিনিময় করেন।

এর আগে ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকার তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দর মসজিদ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-র‌্যালি-২০২৫’-এর মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়-র‌্যালি-২০২৫’ উদ্বোধন করেন। এতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের শান্তিরক্ষীরা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তঃবাহিনী সংস্থাসমূহের মনোনীত প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ