আমতলী উপজেলার সোনাখালী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল গাফফার আকন ও তার পরিবারের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে হয়রানী করতে সামসুল হক মৃধা ও সাফিয়া বেগম নামের দুই ব্যাক্তি মামলা দায়ের করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনিবার বিকেলে আব্দুল গাফফার আকন আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে লিখিত এমন অভিযোগ করেছেন। এমন ঘটনার এলাকার উত্তেজনা বিরাজ করছে। দ্রুত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহরের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের জেএলনং-২৩ নং মৌজার ৩০১ নং খতিয়ানের ৪৫৭ নং দাগে আসমত আলী মৃধা ১.১৫ একর সম্পত্তি ওয়ারিশ সুত্রে মালিক প্রাপ্ত হন। ১৯৫৪ ও ১৯৬৬ সালে চারটি দলিলে ১.০৩ একর জমি তিনি আব্দুল মান্নান আকন ও তার লোকজনের কাছে বিক্রি করে দেন। অবশিষ্ট ১২ শতাংশ জমিতে আসমত আলী মৃধা দুই ছেলে সামসুল হক মৃধা ও কাঞ্চন মৃধা বসত ভিটা নির্মাণ করে বসবাস করছেন। ক্রয়কৃত ওই জমি আব্দুল মান্নান আকন গত ৬৫ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছেন। ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী ওই জমির নিয়ে সামসুল হক মৃধা বাদী হয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল গাফফার আকনকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের বিরুদ্ধে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মামলা দুটি আমলে নিয়ে আমতলী থানার তৎকালিন ওসি মোঃ আবুল বাশার ও বরগুনা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তৎকালিন আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার তদন্ত প্রতিবেদনে হয়রানী করতে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন এবং বরগুনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোঃ মনিরুজ্জামান তদন্তে উল্লেখ করেছেন সামসুল হক মৃধা দায়েরকৃত মামলায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। মামলার বাদী সামসুল হক মৃধার বাবা আসমত আী মৃধা ১.০৩ একর জমি আব্দুল মান্নান আকন ও তার লোকজনের কাছে বিক্রি করেছেন। অবশিষ্ট ১২ শতাংশ জমিতে সামসুল হক মৃধা ও তার ভাই কাঞ্চন মৃধা বসতবাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করছেন। এ তদন্ত প্রতিবেদনের পরে আদালতের বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। এ ঘটনার ছয় বছর পরে একই ঘটনায় সামসুল হক ও তার চাচাতো ভাবি সাফিয়া বেগম বাদী হয়ে গত বুধবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভুমি অপরাধ ও প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের বিচারক মোঃ ইফতি হাসান ইমরান মামলা দুটি আমলে নিয়ে গাজীপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ রনজিৎ কুমার সরকারকে তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন আদালতের দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় উল্লেখ করেছেন মামলার প্রধান আসামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল গাফফার আকন ও তার ভাই শাহীন আকন, বৃদ্ধ বাবা আব্দুল মান্নান আকন ও চাচা রহিম আকন জমি চাষাবাদে বাঁধা দিয়ে তাদের মারধর করেছেন। কিন্তু এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, আসামী গাফফার আকন ও তার ভাই শাহীন আকন বাড়ীতে থাকেন না। তারা দুই ভাই ঢাকায় ব্যবসা করেন। মামলায় উল্লেখিত ঘটনা ঘটেনি বলে তারা জানান। মামলার বাদী সামসুল হক মৃধা ও সাফিয়া বেগম তাদের হয়রানী করতেই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। একই ঘটনায় এবং একই ব্যাক্তিদের আসামী করে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, জমি নিয়ে সামসুল হক মৃধার সঙ্গে আব্দুল গাফফার আকনের কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এখন শুনতে পাচ্ছি সামসুল হক আকন ও সাফিয়া বেগম তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তারা আরো বলেন, আব্দুল গাফফার আকন ও তার ভাই শাহীন ঢাকায় থেকে ব্যবসা করেন।
মামলার প্রধান আসামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুল গাফফার আকন বলেন, গত ২০ বছর ধরে আমি ও আমার ভাই শাহীন আকন ঢাকায় ব্যবসা করে আসছি। বছরে দুই একবার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যাই। কিন্তু আমাদের হয়রানী করতেই ঘটনা সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি আরো বলেন, সামসুল হক মৃধা ও সাফিয়া বেগম ভুমি অপরাধ ও প্রতিরোধ আইনে যে জমি নিয়ে মামলা করেছেন ২০১৯ সালেও একই জমি নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা করেছেন। কিন্তু ওই মামলা দুটি তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় আদালতের বিচারক মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। এখন স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারীদের প্ররোচনায় তারা আমাদের হয়রানী করতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছন। দ্রুত এমন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান তিনি।
মামলার বাদী সামসুল হক মৃধা বলেন, আমার বাবা আসমত আলী মৃধা তার ১.১৫ একর জমি থেকে ১.০৩ একর জমি আব্দুল মান্নান আকনের কাছে বিক্রি করেছেন তা সঠিক কিন্তু অবশিষ্ট জমি আমি বুঝে পাইনি। তাই জমি বুঝে পেতে আদালতে আবারো মামলা করেছি। তবে মামলায় যে ঘটনা বর্ননা করেছেন এমন ঘটনা ওইদিন ঘটেনি। কেন মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দায়ের করেছেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি তিনি।
গাজীপুর পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, দুইটি মামলার আদালতের নথিপত্র পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।