কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় নবনির্মিত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস’ এর শুভ উদ্বোধন করেন আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত এই সেনানিবাসের প্রধান ফলক উন্মোচনসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের ৪টি ইউনিট (পদাতিক, ইঞ্জিনিয়ার, এসএসডি ও সিএমএইচ) এবং এসএসডি জাজিরা এর পতাকা উত্তোলন প্যারেড পরিদর্শন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। এ সময় সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, এসবিপি (বার), ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ- জামান, এসজিপি, পিএসসি; বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ সাইফুল আলম, এসবিপি, ওএসপি, এসইউপি, এডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি; জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী, বিএসপি (বার), এনডিসি, পিএসসি এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার সাভার এরিয়া মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক, এনডিসি, এইচডিএমসি, পিএসসি নবনির্মিত ইউনিটসমূহের পতাকা উত্তোলন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিঠামইন এলাকার কৃতি সন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সুখে-দুঃখে সর্বদা সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন এবং দেশের কল্যাণে কাজ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৩ সালে তিনি সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ এ ভূষিত হন। স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা, এই এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং নিঃস্বার্থ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ নবনির্মিত এই সেনানিবাসটি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার মিঠামইন এলাকায় একটি সেনানিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে যা হাওড় এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নতুন স্থাপিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসটি দেশের উত্তর-পূর্বাংশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরো জোরদার করবে। মিঠামইন এলাকাটি বন্যা প্রবণ এলাকা হওয়ায় যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অসামরিক প্রশাসনকে তড়িৎ সহায়তার মাধ্যমে যে কোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে।
এছাড়াও, অদূর ভবিষ্যতে অত্র সেনানিবাসে স্কুল ও কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে মিঠামইন এলাকার শিক্ষার হার ও গুনগতমানকে সমৃদ্ধ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। অধিকন্তু, নির্মাণাধীন এলিভেটেড রোডের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস সংযোগের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী এলাকা সহ সিলেট ও ঢাকার যোগাযোগ সহজতর হবে। সর্বোপরি এ সেনানিবাস হাওড় অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত করবে।
তিনি বলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী আজ একাগ্রতা, কর্মদক্ষতা এবং নানাবিধ জনসেবামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের জনগণের মনে স্থান করে নিয়েছে। যেকোন দুর্যোগ, আর্ত-মানবতার সেবা ও জানমাল রক্ষায় সেনাবাহিনীর কর্তব্য ও দায়িত্বশীল ভূমিকা সব সময় প্রশংসিত হয়ে আসছে।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশ¡ শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ একটি ‘ব্র্যান্ড নেইম’ যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে দায়িত্বশীলতা ও সহমর্মিতার সাথে দুর্গতদের পাশে থেকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং সমগ্র জাতির কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি আস্থার নাম হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের প্রত্যেক সদস্যের পেশাগত দক্ষতা ও কর্মচাঞ্চল্যে এই সেনানিবাস অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অত্যাধুনিক সেনানিবাস হিসেবে পরিগণিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্মিত সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে এসে পৌঁছালে সম্মানিত সেনাবাহিনী প্রধান এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) ও এরিয়া কমান্ডার ঘাটাইল এরিয়া তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রীপরিষদের সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরিবারবর্গ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, জেসিও এবং অন্যান্য পদবীর সেনাসদস্যগণ ও মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।