বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হামাসের হামলা মোকাবেলা করতে ইসরায়েলের এত সময় লাগলো কেন?

আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস যখন গাজার কাছাকাছি ইসরায়েলের এলাকার ভেতরে দীর্ঘ ধরে ইচ্ছামতো ঘোরাফেরা করছিল, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তখন কোথায় ছিল? অনেকেই এখন এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।

যেমন একজন ইসরায়েলি অভিযোগ করেছেন “ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দ্রুত জবাব দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”

যেসব এলাকায় হামাস হামলা চালিয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের সেনাবাহিনীর আসার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। যদিও এই সময় তারা নিরাপত্তার জন্য নিজেদের বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপরেই নির্ভর করেছেন।

এরকম কেন হল? এই প্রশ্নের পূর্ণাঙ্গ উত্তর পেতে হয়তো আরও সময় লাগবে।

কিন্তু এই হামলার ঘটনায় মনে হচ্ছে যে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ধরনের আকস্মিক, দ্রুত গতির ও বড় পরিসরের হামলায় হতচকিত হয়ে গিয়েছিল। তারা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সেটি প্রতিরোধের জন্য তাদের যথেষ্ট প্রস্তুত ছিল না।

এ ধরনের আক্রমণ সফল করতে হলে হামাসের জন্যও এমন আকস্মিক হামলা চালানোই একমাত্র উপায় ছিল।

হামাসের এই হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে ইসরায়েলি গোয়েন্দারাও ব্যর্থ হয়েছে।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলকে বিভ্রান্ত করতে এই গোষ্ঠী বহুদিন ধরেই এমন আচরণ করে আসছিল যে, তারা পরিকল্পিত হামলা চালাতে অক্ষম বা তাদের ইচ্ছা নেই।

গাজা থেকে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে।

তারা সম্ভবত ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সব ধরণের যোগাযোগ বন্ধ রাখা অনুশীলন করেছিল। যার কারণে তাদের অভিযানের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

সেই সঙ্গে তারা সম্ভবত ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করায় অভিযানের গোপনীয়তা বজায় রাখতে পেরেছে।

এরপর হামাস গুরুত্ব দিয়েছে দ্রুত গতির আর বড় পরিসরে হামলা চালানোর ওপর।

নিজেদের এসব কর্মকাণ্ড আড়াল করতে তারা ইসরায়েলে হাজার হাজার রকেট উৎক্ষেপণ করেছে।

ইসরায়েলে কী ঘটছে তা নজরদারির জন্য সীমান্ত বেষ্টনীতে যেসব পর্যবেক্ষণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হতো সেগুলোর ওপরও ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।

এরপর বিস্ফোরক এবং যানবাহন ব্যবহার করে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তত ৮০টি জায়গা ভেঙে তারা ইসরায়েলে প্রবেশ করে।

এসব কাজে মোটর চালিত হ্যাং-গ্লাইডার অর্থাৎ অনেকটা প্যারাসুটের মতো দেখতে মানববাহী বাহন এবং মোটরবাইকও ব্যবহার করা হয়।

এভাবে গাজা থেকে ৮০০ থেকে এক হাজার সশস্ত্র হামাস সদস্য একাধিক স্থানে আক্রমণ চালাতে শুরু করে এবং ছড়িয়ে পড়ে।

হামাসের এমন ঝাঁক বেধে প্রবেশের কৌশল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে – অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও।

এই বড় পরিসরের কার্যকলাপ ইসরায়েলের নেতৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেয়ার কথা।

কিন্তু একে তো শনিবার সকাল তার ওপর ধর্মীয় ছুটির দিন হওয়ায়, সেদিন পরিবেশ আগে থেকেই শান্ত ছিল।

ইসরায়েলের রাস্তায় সামরিক ট্যাঙ্ক।

হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে একটি অংশ বেসামরিক মানুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং অন্যরা সামরিক ফাঁড়িগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো দখল করে হামাস সদস্যদের ছবি পোস্ট করা আর সামরিক ঘাটিগুলো সহজে দখল করে নেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে, এসব ঘাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ঠুনকো ছিল।

সেই সাথে সীমান্তের সুড়ঙ্গগুলো দীর্ঘক্ষণ খোলা অবস্থায় ছিল যাতে জিম্মিদের গাজায় নিয়ে যাওয়া যায় এবং শেষ পর্যন্ত ওই সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করার জন্য ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়।

পুরো ঘটনায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অগোছালো বলে মনে হয়েছে।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গাজার পরিবর্তে পশ্চিম তীরের দিকে বেশি নজর দিয়েছে। সেখানে একটা শূন্যতার তৈরি হয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নানা নীতির কারণে ইসরায়েলি সমাজে যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করতে সম্ভবত সেটাও বিবেচনায় নিয়েছে হামাস।

ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দাদের দীর্ঘ সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সেরা এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু তারা হয়তো তাদের প্রতিপক্ষের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখেছিল।

হামাসের এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার সাথে তুলনা করা হয়েছে

হামাসের এই হামলাকে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার সাথে তুলনা করা হচ্ছে, যখন কেউ ধারণাও করতে পারেনি যে যাত্রীবাহী বিমানগুলোকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

একে প্রায়ই ‘ফেইলিওর অফ ইমাজিনেশন’ বা ‘চিন্তার ব্যর্থতা’ বলেও অভিহিত করা হয়।

এমন ‘চিন্তার ব্যর্থতা’ ইসরায়েলের জন্য অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এতে করে তারা শত্রুপক্ষের এমন বড় ধরণের হামলা মোকাবিলার জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়বে।

পুরো ঘটনায় যেসব ফাঁকফোকর বা দুর্বলতার জায়গা আছে সেগুলো নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে তদন্ত করে দেখা হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে পিছনে ফিরে তাকানোর পরিবর্তে সামনে কী করা যেতে পারে সেদিকেই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ