সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাট নিয়ন্ত্রণে প্রশ্নবিদ্ধ নাসিক!

ইজারা চূড়ান্ত করতে এরইমধ্যে মোট ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের দরপত্র আহবান করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক)। অথচ, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই প্রায় সাতটি হাট কব্জায় নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগ উঠেছে, বিনা অনুমতিতে হাটে কোরবানীর পশু তুলেছে দখলদাররা। তবে, এ নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই নাসিকের। অজানা কারণে দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছেন কর্মকর্তারা! এমতাবস্থায় সচেতন মহলের লোকজন বলছেন, কোরবানীর হাট নিয়ন্ত্রণে রহস্যজনক নিরবতার পাশাপাশি পুরোপুরি ব্যর্থ নাসিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে দরপত্র আহ্বান করা হাটগুলো হলো: নাসিক ১নং ওয়ার্ডের সিআইখোলা বালুর মাঠ, ৩নং ওয়ার্ডে সানারপার লিথি গার্মেন্টস সংলগ্ন মৌলভি মো. ফজলুর রহমানের খালি জায়গা, ৪নং ওয়ার্ডে টাইগার অয়্যার রি-রোলিং মিলস মাঠ, ৫নং ওয়ার্ডস্থ ওমরপুরের সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার রোডের পাশে জালাল উদ্দিন আহম্মেদের খালি জায়গা, ৮নং ওয়ার্ডের গোদনাইল ইব্রাহীম টেক্সটাইল মিলসের খালি মাঠ (রেললাইনের পশ্চিম অংশ), ৯নং ওয়ার্ডে জালকুড়ি উত্তরপাড়া দশপাইপ সংলগ্ন মোতালিব বেপারীর বালুর মাঠ, ১৯নং ওয়ার্ডের সামিট পাওয়ার প্লান্টের পেছনে খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট, ২০নং ওয়ার্ডে সোনাকান্দা মাঠে পশ্চিম পাশের খালি জায়গা, ২১নং ওয়ার্ডে স্কুল ঘাট সংলগ্ন বালুর মাঠে, ২৩নং ওয়ার্ডে পূর্বপাড়া লতিফ হাজীর মোড় সংলগ্ন খালি জায়গা, একই ওয়ার্ডের সমরক্ষেত্র, ২৪নং ওয়ার্ডে কাইতাখালি গোলন্দাজ সাহেবের খালি জায়গা, ২৪নং ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ গুদাড়াঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা ও ২৫নং ওয়ার্ডের উত্তর লক্ষণখেলালা খেয়াঘাটের পাশের খালি মাঠ।

এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ডের সিআই খোলা বালুর মাঠ, ৪নং ওয়ার্ডের টাইগার অয়্যার রি-রোলিং মিলস এর মাঠ, ৫নং ওয়ার্ডের ওমরপুরের মাঠ, ৮নং ওয়ার্ডের গোদনাইল ইব্রাহীম টেক্সটাইল মিলস’র খালি মাঠ, ৯নং ওয়ার্ডের জালকুড়ি উত্তরপাড়া দশ পাইপ সংলগ্ন তোতালিব বেপারীর বালুর মাঠ, ২০নং ওয়ার্ডের সোনাকান্দা মাঠের পশ্চিমের খালি জায়গা ও ২৪নং ওয়ার্ডের নবীগঞ্জ গুদাড়াঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা দখল করে হাটের প্রস্তুতি নিয়েছেন স্ব স্ব এলাকার প্রভাবশালীরা। এর মধ্যে কিছু জায়গায় প্যান্ডেল টানিয়ে গরুও তোলা হয়ে গেছে!

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এলাকায় এসব আইন বিরোধী কর্মকান্ড হলেও একেবারেই টুপ রয়েছেন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সম্প্রতি মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানীর হাট প্রসঙ্গে কোন নির্দেশনাও দেননি মেয়র আইভী। প্রশ্ন উঠছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক সোচ্চার থাকা আইভী ‘অবৈধ হাট’ প্রসঙ্গে নিশ্চুপ কেনো? নাকি শর্ষ্যরে মধ্যেই রয়েছে ভূত!

জানা গেছে, পশুর হাট প্রসঙ্গে ২৯ জুন গণমাধ্যমে নাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল আমিনের স্বাক্ষরিত ইজারা বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়। এতে বলা হয়, আগামী ৩০ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত দরপত্র বিক্রয়ের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। জমাদানের শেষ তারিখ ৩ জুলাই দুপুর ২টা, সেদিনই বিকেল ৩টায় দরপত্র খোলা হবে। এরপর সর্বোচ্চ দরদাতাকে দেওয়া হবে ইজারা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল আমিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ওপেন টেন্ডার খোলা হবে। যে পাবে, সেই নিয়ে যাবে। যে দখল করেছে, সে নাও পেতে পারে। তাই ইজারা সম্পন্ন করতে কোন রকম বিঘ্ন যাতে না ঘটে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, হাট যারাই দখল করুক সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হচ্ছে এটাকে দখলমুক্ত করে তারপর ইজারা দেওয়া। নিয়ম অনুযায়ী, অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপনের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপর সরকারি হাট বাজার ইজারা ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি সংশ্লিষ্টনীতিমালা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে সিটি করবোরেশন বা উপজেলা প্রশাসন। নির্ধারিত দিনে সকলের সম্মূখে টেন্ডার খুলে সর্বোচ্চ দরদাতাকে হাটের ইজারাদার হিসেবে ঘোষণা করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে ঈদের পূর্ববর্তী ৩ দিনের জন্য পশু বিক্রির অনুমতি পাবে ইজারাদার। তাই অনতিবিলম্বে দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ সিটি করপোরেশনের। অন্যথায় একথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, নাসিকের কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই বে-আইনীভাবে হাটগুলো বসানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ