বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সরকারে আসতে চাইলে নির্বাচনে আসুন: প্রধানমন্ত্রী

অনির্বাচিত সরকারের দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অনির্বাচিত সরকার হচ্ছে, আতঙ্কের নাম। যারা অনির্বাচিত সরকারের কথা বলছে, তারা দেশ ও জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে ফিরিয়ে নিতে চায়।

‘অনির্বাচিত সরকার জনগণ মেনে নেবে না। অনির্বাচিত সরকার ফিরে আসবে না। অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। যারা অনির্বাচিত সরকার চান, তারা এই দুঃস্বপ্ন বাদ দিয়ে সরকারে আসতে চাইলে নির্বাচনে আসুন। এ জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করুন।’

বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আরও বলেন, অনির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে যাদের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা, তাদের বলব, রাজনীতি করেন, জনগণের কাছে যান। জনগণের ভোট নেন, ক্ষমতায় আসেন। কোনো আপত্তি নেই। জনগণ যাদের ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে, এটাই বাস্তবতা।

আওয়ামী লীগ সরকার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লে­খ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন যে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, সেটা তো আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। রংপুরের মেয়র নির্বাচনে আপনারা দেখেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয়েছে, আমরা মেনে নিয়েছি। এখানে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে আসা ছয়জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। এই উপনির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সংসদ নেতা বলেন, উপনির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। আগামীতেও কেউ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলার বা সমালোচনার সুযোগ পাবে না। আমরা আজ ক্ষমতায় আছি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব বলে মনে করি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ছয়টি উপনির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছয়টি উপনির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেও নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে।

তিনি বলেন, অনেকেই বলেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। তাই এখানে নাকি অনির্বাচিত সরকার আনতে হবে। আমার প্রশ্ন, এই যে ছয়টি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, এই নির্বাচন সম্পর্কে কেউ তো একটি কথাও বলতে পারেনি।

শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও কি এই নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পেরেছে? তুলতে পারেনি। তবে কিছু লোক আছে, তাদের সবসময় উলটো কথা বলতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নির্বাচন যে স্বচ্ছ হয়েছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে, এটা কি প্রমাণ করে না যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সক্ষমতা রাখে? সরকার নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি, করেও না, করবেও না।

তিনি বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই তো আমাদের আন্দোলন। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্যই তো আমরা সংগ্রাম করেছি। সেই সংগ্রামের সাফল্য বয়ে এনে আজকে ভাতের অধিকার যেমন আমরা নিশ্চিত করেছি, তেমনি ভোটের অধিকারও আমরা নিশ্চিত করেছি। এটাই বাস্তব। যদিও দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই বাস্তবতাকে কেউ কেউ অস্বীকার করতে চায়।

সংসদ নেতা বলেন, কিছু কিছু লোক বলে যাচ্ছে যে, দুই-তিন বছর অনির্বাচিত সরকার থাকলে ক্ষতিটা কী? এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? আমার প্রশ্ন হচ্ছে- এটি কোন ধরনের কথা। কোন ধরনের আবদার। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার আসবে, যার জন্য আমাদের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করা। সেই গণতন্ত্র যখন ফিরিয়ে এনেছি, অব্যাহতভাবে গণতন্ত্র আছে বলেই আজ দেশের উন্নতিটা মানুষের কাছে দৃশ্যমান।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, যারা অনির্বাচিত সরকার আনতে চায়, তারা কি দেশের সংবিধানে বিশ্বাস করে? গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে?

সংসদে বুধবার দেওয়া বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের টেলিফোনে আড়িপাতার সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেলিফোনে আড়িপাতা নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন। কিন্তু আড়িপাতা না গেলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করা হবে কিভাবে? আড়িপাতার মাধ্যমেই জানা সম্ভব, কারা ষড়যন্ত্র করছে, সন্ত্রাস সৃষ্টি ও জঙ্গি তৎপরতার পরিকল্পনা করছে। তাই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা আইনসিদ্ধ বলেও দাবি করেন তিনি।

সরকারের ধারাবাহিকতার কারণেই উন্নয়ন দৃশ্যমান উল্লে­খ করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে আমরা মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন ও অভুক্ত থাকবে না। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করার কাজ চলছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাব। যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজ দেশের ও মানুষের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা যথাযথ বাস্তবায়নের কারণে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হয়েছে।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন শুরু হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী অধিবেশনের প্রথম দিনই ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে তার এই ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন সরকার ও বিরোধী দলের ২০৯ জন সংসদ সদস্য। আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় ৮০ ঘণ্টা ২৭ মিনিট। বুধবার সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

বৃহস্পতিবার দিনের কার্যসূচি অনুযায়ী প্রশ্নোত্তরপর্ব টেবিলে উত্থাপিত হওয়ার পর একটি বিল পাশ হয়। এরপর গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যরা প্রথম দিন অধিবেশনে যোগ দেওয়া উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। পরে বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সমাপনী বক্তব্য দেন। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার সমাপনী বক্তব্য শেষে চলতি অধিবেশনের ইতি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ