মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই সরকারের ৭৩হাজার কোটি টাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু

ফাইল ফটো।

কোন প্রকারের সম্ভব্যতা যাচাই ছাড়াই ৭৩ হাজার কোটি ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬ লেনের কাজ শুরু করছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে তিনটি প্রকল্প নিয়েছে। করোনা মাহামারি উত্তোর ও রাশিয় ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাবে কৃচ্ছতা সাধনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে প্রকল্প শুরুর পথে হাটছে মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও মাথারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের আগামী দিনের আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহনের বিষয়টি মাথায় রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেন থেকে বাড়িয়ে ছয় লেন করতে ৭৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়। সরকারের যে কোন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। সড়কখাতের সবচেয়ে বড় হাজার হাজার কোটি টাকার এ মেগা প্রকল্পের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) কোন সম্ভাব্য যাচাই বাছাই করা হয়নি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার নিউজফ্ল্যাশ ২৪ বিডি ডটকমকে বলেন, ৭৩ হাজার কোটি ব্যয়ে নেওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬ লেনে উন্নীত করা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। তবে সম্ভাব্যতা যাচাই করেই এই প্রকল্পের কাজ আমরা করবো।

হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া কি ভাবে নেওয়া এর হলো জবাবে সচিব বলেন, যে কোন কাজ প্রাথমিক কছিু তথ্য দিয়ে শুরু করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেটাই করা হয়েছে।

আগামী দিনে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পন্য পরিবহনের বাস্তবতায় প্রকল্প গ্রহনে রয়েছে বললেন সড়ক পরিবহন সচিব।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে দেশের পন্য পরিবহনে লাইফ লাইন ধরা হলেও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভাব হচ্ছে না। এছাড়াও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের পন্য খালাসে এ সড়ক কতোটা কাজে দেবে তাও খতিয়ে দেখা হয়নি। এছাড়াও মংলা পোর্টেও পন্যে খালাস হচ্ছে। এটাও পুরো মাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে না। এরপর পায়রা বন্দও রয়েছে। সেখানে অল্প কিছু পন্য আসছে। তাছাড়া পদ্মা সেতু নির্মাণ ও এ সেতুতে পদ্মা রেল লিংক স্থাপনের ফলে আমদানি ও রপ্তানিসহ অন্যান্য পন্য পরিবহনে মংলা বন্দর ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়বে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যস্ততা কমবে।

ঢাকার অদূরে নির্মিত পানগাঁও বন্দর যার সক্ষতা পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হলে এ পথে কি পরিমান আমদানি-রপ্তানী পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে তা ষ্টাডি করে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এছাড়া গাজীপুরের ধীরাশ্রমে বিশাল জায়গা জুড়ে প্রস্তবিত আইসিডি টার্মিনাল নির্মাণ হবে ১৫৪ একর জমিতে। বর্তমানে কমলাপুরে ৫০ একর জাগায় আইসিডি রয়েছে। আইসিডি টার্মিনালের ডিপো ব্যবহার করে যে পরিমান রেলপথে যে আমদানী- রপ্তানী করা সম্ভব তাও বিবেচনা করা হয়নি। তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে বর্তমান যানজটের কারণে আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্যের কি পরিমান ক্ষতি হচ্ছে সেই তথ্যও নেই সরকারের হাতে সূত্রটি জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৪ লেন থেকে বাড়িয়ে ৬ লেন করার বিষয়ে এক সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ৮ বছর চলে গেছে। নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই ৬ লেনের ৭৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকার কার্যক্রম শুরু করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।

এজন্য তিন প্রকল্পের পিডিপিপির কাজ খুব শিগগির শুরু হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম পর্ব ইমপ্রুভমেন্ট অব ঢাকা (যাত্রাবাড়ী)- দাউদকান্দি পার্ট -১ ঢাকা-চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাইওয়ে, ডেভলপমেন্ট অব ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ে টু সিক্স লেন হাইওয়ে এন্ড সেপারেট এসএমভিটি লেন অন বোথ সাইডস(কুমিল্লা এন্ড ফেনি) এবং ডেভলপমেন্ট অব ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে ইনক্লডিং এসএমভিটি লাইন অন বোথ সাইডস(চট্টগ্রাম পার্ট)।

গত ২৫ জানুয়ারি ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সভাপতিত্বে তিন পিডিপিপি বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কোভিডোত্তর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিশ্বব্যাপী বিরূপ প্রভাব এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সার্বিক বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।

সার্বিক বাস্তবতায় ৭৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থের উৎস, সম্ভাব্য বৈদেশিক ঋণ / অনুদান প্রাপ্তি, প্রকল্পের গুরুত্ব বাস্তবায়নে আর্থিক রিটার্ন, ফিজিবিলিট স্টাডি, আর্থ-সমাজিক প্রেক্ষপটসহ নানা বিষেয়ের ওপর আলোচনা হয়। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ওই এসব বিষয়ে কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি।

তারপরেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পিডিপিপি’র ওপর একটি উপস্থপনা সভায় তুলে ধরা হয়। সমজাতীয় প্রকল্পসমূহের তুলনায় প্রস্তাবিত পিডিপিপিগুলোতে প্রকল্প ব্যয় অত্যধিক বেশি দেখানো হয়েছে। এসব কাজে অতিমূল্যায়িত এর ভিতর বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজফ্ল্যাশ ২৪ বিডি ডটকমকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়নে এথেকে সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের কোন সুযোগ নেই।
সড়ক পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যানজট মুক্ত রাখতে ঢাকার সাথে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের আমদানি-রপ্তানীসহ অন্যান্য পন্য পরিবহন সহজ করতে এর প্রয়োজনীয়তা হয়তো রয়েছে।

বর্তমানে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ সংশ্লিষ্ট বৈশ্বায়িক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্য সম্প্রসারণের সক্ষমতা বিবেচনায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিশ্লেষণ করা হয়নি।

প্রস্তাবিত এলাইনমেন্টে ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে উলম্ব সম্প্রসারণের সুযোগ থাকেব কিনা সে বিষয়টিও প্রকল্প গ্রহনে আমলে নেয়া হয়নি।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি অথবা পর্যাপ্ত যৌক্তিক তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত প্রতিবেদনসহ আলোচ্য পিডিপিপিসমূহ পুন:পর্যালোচনার জন্য পাঠাতে বলা হয়েছে বলে সূত্রটি বলছে।

নিউজফ্ল্যাশ/এসএম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ