শুক্রবার, ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সচিবালয় অবরুদ্ধের পর সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া আহত ৩০

সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত ৯টার পর এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।

সচিবালয়ে আনসারের একদল সদস্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছে– এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ‘স্বৈরাচারের দালাল’ আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথমে আনসাররা ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। তারা ছাত্রদের ওপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে সেখানে অবস্থান নেন সেনাসদস্যরা।

সংঘর্ষে আহত হয়ে ৩০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে দু’জন আনসার সদস্য এবং বাকিরা শিক্ষার্থী।

রাত ১০টায় সচিবালয়ের সামনের সড়ক দখলে নেন ছাত্ররা। এ সময় আনসার সদস্যরা পিছু হটে। কিছু আনসার সদস্য জিপিও বক্সের দিকে পালিয়ে যান। আর কিছু সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর সহায়তা চান। অনেক আনসার সদস্য তাদের পোশাক খুলে ফেলেন। এ সময় এসব পোশাকে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্ররা।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোতাসিম বিল্লাহ মাহফুজ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, উপদেষ্টা নাহিদ ভাইসহ হাসনাত ও সারজিস ভাইকে সচিবালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিপথগামী কিছু আনসার সদস্য ও ছাত্রলীগের প্রেতাত্মারা। আমরা সবাই মিলে সচিবালয়ে মার্চ করে তাদের মুক্ত করে নিয়ে আসব। সবাই যোগ দিন, বিষয় সবাইকে অবগত করুন, অতীব জরুরি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে অঙ্গীভূত সাধারণ আনসার সদস্যরা। রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েক হাজার আনসার সদস্য। বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের ‘রেস্টপ্রথা’ বাতিল করে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তবে আরেকটি অংশ জাতীয়করণ না নিয়ে বাসায় ফিরবে না জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়।

বিক্ষোভের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর থেকেই সচিবালয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারেননি। সন্ধ্যায় অফিস ছুটি হলেও বাসায় ফিরতে পারেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

এর আগে বিক্ষোভের মধ্যে রাত পৌনে ৮টার দিকে সচিবালয়ে পাঁচ উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সেখানে যোগ দেন আনসার বাহিনীর ১০ জন প্রতিনিধিও। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে যোগ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার; তথ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম; যুব, ক্রীড়া, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অপর উপদেষ্টার পরিচয় জানা যায়নি।

রোববার দুপুর ১টার দিকে আনসার সদস্যরা প্রেস ক্লাব ও কদম ফোয়ারার রাস্তা ছেড়ে দিয়ে তারা জিরো পয়েন্ট ও সচিবলয়ের রাস্তা অবরোধ করেন। পরে সচিবালয়ের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।

এর পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে সাধারণ আনসারদের যে রেস্ট প্রথা বা ছয় মাসের বিরতি রয়েছে, সেটা থাকবে না। এটা তাদের মূল সমস্যা। নিয়োগবিধি থেকে সেটা কীভাবে বাতিল করা হবে, তা কমিটির সুপারিশের পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আনসারদের অন্যান্য দাবির বিষয়ে একটা সুপারিশ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি পর্যালোচনা করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তার পর আমরা আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বসে সিদ্ধান্ত নেব। আনসার সদস্যরা যেসব বৈষম্যের শিকার, তারা যেসব সমস্যার মুখে পড়েন, সেগুলোর যৌক্তিক সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

এর পর সাধারণ আনসারদের পক্ষ থেকে সমন্বয়ক নাসিম মিয়া বলেন, বৈঠকে রেস্ট প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আপাতত আন্দোলন স্থগিত থাকবে।

সর্বশেষে রোববার মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন আন্দোলনকারী আনসার সদস্যরা। তারা সকাল ৮টার পর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। পরে ৯টার দিকে প্রেস ক্লাব ও কদম ফোয়ারা এলাকায় রাস্তায় পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে রাজধানীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে পথচারীরা কথা বললে, তাদের ওপর চড়াও হন আনসার সদস্যরা।

সকাল ১০টা থেকে গুলিস্তান শিশু পার্ক, মতিঝিল শাপলা চত্বর, কাকরাইল, মালিবাগ মৎস্য ভবন ও শাহবাগ মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা যায়। সপ্তাহের প্রথম অফিস ডে হওয়ায় রাস্তায় গাড়ির চাপও বেশি, এতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সামলাতে হিমশিম অবস্থা পুলিশের। এ ছাড়া চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন পথচারীরা।

এদিকে, চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে চট্টগ্রামে দিনভর বিক্ষোভ করেন আনসার সদস্যরা। রোববার সকালে নগরের জামালখান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নগরের চেরাগী পাহাড় ও আন্দরকিল্লা মোড় প্রদক্ষিণ করেন। দুপুর ২টার পর তারা চট্টগ্রাম আদালত ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ