কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের কাছে স্বদেশ মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আশ্রিতজীবন অনেকটা বন্দিজীবন। ‘এমন জীবন চাই না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই’। এজন্য মিয়ানমারকে জোর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরাল ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পের শিক্ষা ব্যবস্থা, খাদ্য, নিরাপত্তা বিষয়েও আলাপ করেছেন।
পরিদর্শনকালে প্রতিনিধিদলের প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার হাতে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়েরের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা একটি আবেদনও দেয়। যেখানেও প্রত্যাবাসনের দাবি জানানো হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বুধবার (১২ জুলাই) সকাল ৯ টায় বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান। যেখান থেকে সড়কপথে রওনা দেয় উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে। সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে প্রতিনিধিদল উখিয়া বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর- পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিষ্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। ওখান থেকে হেঁটে একে একে পুষ্টি কেন্দ্র, ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এরপর ১১ নম্বর ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে একদল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে। বৈঠকে ১০ নারী ও ১০ পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আলাপকারী ১১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়ে ক্যাম্পে শিক্ষার ব্যবস্থা কম। অল্প লেখাপড়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই। নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না বলে জানানো হয়েছে।
মো. ইউসুফ নামে এক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত জানতে চেয়েছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের আশ্রিতজীবনকে বন্দিজীবন বলে জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধও জানানো হয়েছে।
মোহাম্মদ ইদ্রিস নামে এক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধিদলকে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গারা আপত্তি জানিয়েছেন। খাদ্য সহায়তা যেন আগের মতো দেয়া হয় এমন দাবিও জানানো হয়।
ছৈয়দ নুর নামে এক রোহিঙ্গা জানান, আলাপকালে রোহিঙ্গারা তাদের নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এটা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
প্রতিনিধি দলটি পরিদর্শনকালে তাদের পিছু নেয় রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা। দীর্ঘ সময় পর তারা উজরা জেয়াকে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, প্রতিনিধিদলটির কাছে তারা নিহত মাস্টার মুহিবুল্লাহর সংগঠনের নেতা পরিচয় দেয়ার পর কথা বলেন। এসময় যে চিঠিটি দেয়া হয়েছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের নানা দাবি রয়েছে। বিশেষ করে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার শহরে ফিরে বিকেলে কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরপর ঢাকা ফিরবেন তারা।
প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থী বিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্য রয়েছেন।