স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোটা আন্দোলনের আড়ালে যারা দেশব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তারা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বৃহস্পতিবার রংপুর শিল্পকলা একাডেমি হল রুমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রংপুরে গত কয়েক দিনের সহিংসতায় আগুনে পোড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার ক্ষতচিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রী বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা থেকে রংপুর আসেন। এরপর তিনি রংপুর তাজহাট মহানগর থানা, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন, রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারের কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন।
মতবিনিময় সভায় তিনি এ ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা তুলে ধরেন। এর আগে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান প্রজেক্টরের মাধ্যমে রংপুরের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্রসহ বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের কথা বর্ণনা করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, রংপুরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মনে হয়েছে আন্দোলনের নামে এই ধ্বংসযজ্ঞ কখনো ছাত্র আন্দোলন হতে পারে না। এই তাণ্ডবলীলা একাত্তরের কথা মনে করিয়ে দেয়। আপনারা রংপুরের মানুষ যা দেখেছেন তার যথেষ্ট ভয়াবহ চিত্র; কিন্তু এর চেয়েও আমরা ঢাকায় আরও ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি। যারা ছাত্র আন্দোলন করেছে তাদের আন্দোলনকে পুঁজি করে তাদের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি মূলত মাঠে নেমেছিল। যে কারণে তারা বঙ্গভবন, সংসদ ভবন, বিটিভি ভবন, দুর্যোগ মন্ত্রনালয়, মেট্রোরেল, হানিফ ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকার বিভিন্ন থানাসহ, নরসিংদী কারাগার, রংপুরের তাজহাট থানা, রংপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনারের ভবন, রংপুর নবাবগঞ্জ ফাঁড়ি, রংপুর সমবায় ব্যাংক মার্কেট, পরিবার পরিকল্পনা অফিস, রংপুর পুলিশ লাইনস্, ডিসি ভবন, আদালত ভবন হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নেয়।
শুধু হামলাকারীদের নয়, যারা অর্থায়ন করেছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মতবিনিময় সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আব্দুল বাতেন, আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, সংসদ সদস্য জাকির হোসেন, আসাদুজ্জামান বাবলুসহ অন্য নেতারা।
যারা বাংলাদেশ চায়নি, তারাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় সভায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকালে কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করা বগুড়া শহরের সাতমাথায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মুজিব মঞ্চ, সুত্রাপুরে জাজেস কমপ্লেক্স, বড়গোলা এলাকায় ভূমি অফিস পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় সভার পর সন্ধ্যার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশ চায়নি, ’৭১-এ দেশ স্বাধীন চায়নি, যারা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল তারাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। এ হামলা থেকে বগুড়া বাদ যায়নি। স্বাধীনতাবিরোধীরা এখানে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতার ম্যুরাল ভাংচুর করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা কিছু না বললেও তাদের কমপ্লেক্সে হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ, জাসদ অফিস, জাজেস কমপ্লেক্স, ভূমি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নরসিংদীতে আরেক কাণ্ড ঘটেছে; যারা জঙ্গি উত্থান ঘটাতে চেয়েছিল সেসব জঙ্গিদের ধরে জেলখানায় রাখা হয়েছিল। আন্দোলনের নামে জেলখানা ভেঙে, আগুন দিয়ে জঙ্গি ও অন্য অপরাধীদের বের করে নিয়ে গেছে। অস্ত্র লুটপাট করা হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অন্য নেতাদের বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে তিনজন পুলিশ, একজন আনসার সদস্য, অনেক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী শাহাদতবরণ করেছেন। কয়েকজন সাংবাদিককেও হত্যা ও নারী সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ছদ্মবেশে হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি স্তব্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্ট করা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যারা ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, মেট্রোরেল, ডেটা সেন্টার, হাজার বছরের সংস্কৃতির আর্কাইভ, সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহন ভাংচুরের পর জ্বালিয়ে দিয়েছে তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে (সাংবাদিক) কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের জানাতে চাই, সরকার আপনাদের প্রধান দাবি-দাওয়া পূরণ করেছে। উচ্চ আদালত রায় দিয়েছেন; কিন্তু আপনারা সরকার ও উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ না জানিয়ে আন্দোলনের নামে ধ্বংসলীলা চালালেন। তাই অনুরোধ আপনারা ক্লাসে ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রী ধীরে ধীরে অন্যান্য দাবি-দাওয়া বিবেচনা করবেন। এছাড়া এসব ঘটনায় একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। কেন এ ধ্বংসলীলা ঘটেছে সে ব্যাপারে তারা তদন্ত করবেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু এমপি, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এমপি, খাঁন মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী এমপি, রেজাউল করিম তানসেন এমপি, জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার জাকির হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।