প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও সরকারি তহবিলের অপচয় রোধের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রচেষ্টা ও সরকারি নীতির মাধ্যমে দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতি আবারও গুরুত্ব আরোপ করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। তিনি এর চেয়ারপারসন হিসেবে সভায় সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারো সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ও নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি আরও কমিয়ে আনার ওপর জোর দিয়েছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘তবে, জোর করে বা রাতারাতি মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। আমরা গত চার মাসে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনেছি এবং আমি মনে করি বিদায়ী মাসেও মূল্যস্ফীতির হার কমবে।’
মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সরকারি তহবিলের অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে তিনি বলন, ‘তবে, প্রয়োজনীয় ব্যয় অব্যাহত রাখতে হবে, অন্যথায় অর্থনীতি এগিয়ে যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকল কার্যনির্বাহী সংস্থাকে উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যে প্রকল্পগুলো সমাপ্তির পথে বা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বাস্তবায়নের হার প্রত্যক্ষ করেছেন সেগুলো সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
ব্রিকসের একটি উদ্যোগ নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)-তে বাংলাদেশের যোগদানের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এনডিবি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, কারণ, দেশটি এখন অন্যান্য ঋণদাতা- বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এআইআইবি এবং আইএসডিবি’র পাশাপাশি এই ব্যাংক থেকেও ঋণ নিতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের বর্ধিত ক্ষমতার লক্ষণ এবং এখন আমরা ঋণ নিতে সক্ষম হব যেখান থেকে আমরা আলোচনার মাধ্যমে আরও ভাল ফলাফল পাব।’
খালের ভাটিতে কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ কাজ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এগুলো প্রায়ই পাশাপাশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে সতর্কতার সাথে টেকসই রক্ষণাবেক্ষণ ও কার্যক্রম বিবেচনা করে সারাদেশে স্লুইস গেট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন।
হাতিয়া দ্বীপে একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি সুন্দরবনের মতো দ্বীপের চারপাশে সবুজ বেল্ট বা বনায়ন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
হাসপাতালগুলোর আধুনিকায়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সমান্তরালভাবে অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় জনবল এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে বলেন, যাতে এগুলো প্রথম থেকেই পুরোদমে চালু করা যায়। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মান্নান বলেন, জনবল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের অভাব মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে সার্ফিংয়ে তরুণদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি শুভাড্ডা খাল পুনঃখননের জন্য জলবায়ু তহবিল থেকে তহবিল সন্ধানের পরামর্শ দেন।
ব্রিকস-এ বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই ‘একটি বাড়ির বারান্দায় এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে মূল কক্ষে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্রিকসের এনডিবিতে এক শতাংশ শেয়ার লাভ করেছে এবং আশা করছি কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভবিষ্যতে দেশটি ব্রিকসে যোগ দেবে।
মুদ্রাস্ফীতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতির হার এখনও ২০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে এবং শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতির হার হ্রাস করলেও জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে টেকসই পদ্ধতিতে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি কমবে।
উন্নয়ন প্রকল্পে স্লুইস গেট নির্মাণের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের স্থাপনা আরও ভালোভাবে নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছেন এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলেছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, সুইস গেটগুলো এখন স্টিলের বদলে ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
বারবার প্রকল্প সংশোধনের প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাইলে মান্নান বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই সচেতন।
তিনি বলেন, প্রকল্পের পুনর্বিবেচনা সাধারণত বিনিময় হারের ওঠানামা এবং কিছু অন্যান্য সমস্যার কারণে ঘটে যার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অন্যান্য বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর পদ্ধতি সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বা তহবিলের অপব্যবহার কমাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ সতর্কতা বাড়াতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে এডিবি।
বৈঠকের একেবারে শুরুতে, একনেক সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের সাথে সঙ্গতি রেখে ১৭ আগস্ট ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানায়।
মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় বলে এটি সরকারের অন্যতম সৃজনশীল কাজ।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সমস্ত সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক টেকসই অবস্থায় রয়েছে এবং এটি দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য। ‘কোনও কিছুতে কোয়ান্টাম জাম্প বা খাড়া পতন অনুভব করা ভাল নয়… দেশে মজুরির হার বেড়েছে যা আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান হ্রাসের নির্দেশ করে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে সফলভাবে অংশগ্রহণের জন্য একনেক প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানায়।