শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুখে নয় মাঠেও জবাব, যেভাবে ফিরল কংগ্রেস

বছরের পর বছর ধরে বিজেপির উপহাসের প্রধান টার্গেট ছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কখনও পাপ্পু, কখনও শেহজাদ – এসব নামে ডেকেই রাহুলকে উপহাস করতেন নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপি নেতারা। গত এক দশক ধরে প্রতিটি নির্বাচনেই বিজেপি নেতারা বিরোধী দল কংগ্রেসের গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে নানাভাবে আক্রমণ করেছেন। বুথফেরত জরিপগুলোর আভাসকে মিথ্যা প্রমাণ করে এবার লোকসভা নির্বাচনে ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। বলতে গেলে এ সাফল্যের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় দেখা গেছে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কাকে।

কার্যত সারাদেশে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছিলেন রাহুল গান্ধী। এ পথচলায় জনগণের সঙ্গে তার মিথষ্ক্রিয়া তাকে শুধু টিভির পর্দাতেই নয়, মানুষের কাছাকাছিও নিয়ে গিয়েছিল। তার সম্পর্কে বিজেপির সব ধারণা ও অপ্রপচারকে ভেঙে দিতে ভূমিকা রেখেছিল ওই পদযাত্রা।

রাহুল গান্ধীর কুকুরছানা কোলে নেয়ার দৃশ্য, মানুষকে আলিঙ্গন করা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরের লোকেদের সঙ্গে কথা বলা, শিক্ষার্থী থেকে ট্রাকচালক, শ্রমিক, মেকানিক — সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে সহজভাবে মেলামেশা, এমনটি দেশবাসী আগে কখনো দেখেনি।

নির্বাচনের আগে অনেকেই আশা করেছিলেন, এবার অন্তত লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। কিন্তু তিনি তা করেননি। আর এটা নিয়ে বিরোধী নেতারা উপহাস করতে ছাড়েননি। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় প্রিয়াঙ্কা বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সচেতনভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। রাহুল এবং তিনি উভয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে তাদের ব্যস্ত থাকতে হবে, এটি তারা চাননি। তাদের পরিকল্পনা ছিল দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচার সমাবেশের জন্য প্রিয়াঙ্কা মুক্ত থাকবেন। এ পদক্ষেপটি স্পষ্টতই বেশ কাজে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

রাহুল গান্ধী ইন্ডিয়া ব্লকের সমাবেশে ভাষণ দেয়ার জন্য দেশব্যাপী ভ্রমণ করেছেন। আর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পারিবারিক দুর্গ আমেথি ও রায়বেরেলিতে কংগ্রেসের প্রচারে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গান্ধী পরিবারের অনুগত কিশোরী লাল শর্মা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে পরাজিত করে বড় জয় পেয়েছেন আমেথিতে। এ আসনে ২০১৯ সালে রাহুল গান্ধীর পরাজয়ের একটি মধুর প্রতিশোধ বলে মনে করছেন অনেকে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে তুখোড় বক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। নির্বাচনী ভাষণ দেয়া থেকে শুরু করে দলে পদক্ষেপের পরিকল্পনা এবং লড়াইয়ের প্রতিটি কাজে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন তিনি।

নির্বাচনী প্রচারণায় মোদি যখন বলেছিলেন, কংগ্রেস ভারতের মা-বোনদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিতে চায়। ওই সময় প্রিয়াঙ্কার জবাব ছিল, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে ৭০ বছর হয়েছে। কংগ্রেস ৫৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কেউ কি আপনাদের মঙ্গলসূত্র কেড়ে নিয়েছিল? বরং যখন যুদ্ধ চলছিল, তখন ইন্দিরা গান্ধী তার গহনা তুলে দিয়েছিল দেশসেবার জন্য। আমার মা তার মঙ্গলসূত্র দেশের জন্যই উৎসর্গ করেছেন।’

সাধারণ মানুষের সঙ্গে এ ধরনের মিথষ্ক্রিয়া গান্ধী ভাই-বোনদের জন্য বিজেপি যে ভাবমূর্তি তৈরি করতে চেয়েছিল, তা ভেঙে দিয়েছে। তাদের কারণেই শাসক দল অনেক ঘাঁটিতে ধরাশায়ী হয়েছে।

এছাড়া, তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, কংগ্রেস এবার ৫৪৩ আসনের মধ্যে মাত্র ৩২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ভারতের নির্বাচনের ইতিহাসে তাদের জন্য এটি সর্বনিম্ন। বাকি ২১৫টি আসন ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে বণ্টন করা হয়েছে। আসন নিয়ে কঠিন দর-কষাকষি এবং শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতা বারবার কংগ্রেসকে নেতৃত্ব থেকে পিছিয়ে দিয়েছে। এবার গান্ধী ভাই-বোনের কল্যাণে তার একটা পরিশোধ নেয়া গেল।

এনডিটিভির ফলাফল অনুযায়ী, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের মধ্যে একটি ছাড়া বাকিগুলোর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী ২৪০টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, আর ৯৯টি আসনপেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। ভোটের ফল যাই হোক না কেন, গান্ধী ভাই-বোনের এবার নির্বাচনের মাঠে দুর্দান্ত উপস্থিতি ও উজ্জ্বলতা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ