বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢল নামার ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ শুক্রবার। ২০১৭ সালের এই দিনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছেড়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। ওই সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী রোহিঙ্গা নিধন শুরু করেছিল।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দাবিতে সমাবেশ করেছে কক্সবাজারবাসী।
একই সঙ্গে মিয়ানমারে জাতিগত গণহত্যার বিচার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে কক্সবাজার সিএসও ও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ)।
২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে রাজ্যজুড়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে মিয়ানমার বাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গার ঠাঁই হয় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ের ৩১টি ক্যাম্পে।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ২০১৮ সালে। সে বছর প্রত্যাবাসনের নির্ধারিত দিনে সব ধরনের প্রস্তুতির পরও তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। পরের বছর ২০১৯ সালে প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় উদ্যোগটিও নানা অজুহাতে ভেস্তে যায়। ওই সময় প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল।
সর্বশেষ চলতি বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় এক হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গাকে প্রথম পর্যায়ে প্রত্যাবাসনের জন্য সব কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছিল। পাইলট প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর ছাড়াও রোহিঙ্গা প্রতিনিধিসহ ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত করা গ্রামগুলো পরিদর্শনে নেওয়া হয়। কিন্তু ওই প্রক্রিয়াও শেষ মুহূর্তে এসে ভণ্ডুল হয়ে যায়।
উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরানোর একের পর এক উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর নিজেদের হতাশা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
তাঁদের দাবি, কোনো দেশের সরকারের করা বাছাই তালিকার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল হবে না। কারণ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেকেই আছে, যারা কোনো ওজর-আপত্তি ছাড়াই মিয়ানমারে ফিরতে চায়। আগে সেই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে, তবেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর হলেও আশ্রিত জীবনের শেষ চান বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।
উখিয়ার বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ও রোহিঙ্গা যুবনেতা মো. মুসা বলেন, ‘মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তারা রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করে ভিটামাটি কেড়ে নিয়েছে। আমরা বড় ধরনের জুলুমের শিকার হয়েছি। নির্যাতনের মুখে এ দেশে আশ্রয় নিয়েছি। এখন যুগ যুগ ধরে এই দেশে থেকে গিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও মানুষের ওপর জুলুম করতে চাই না। তাই আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।’