ভারতের গৌহাটির ভিভানতা বাই তাজ হোটেলে অন্ষ্ঠুানরত ২১তম নর্থ ইস্ট গ্যাস্ট্রো সম্মেলনে বিশেষ আমন্ত্রিত স্পীকার হিসেবে আজ (১৭ ফেব্রুয়ারি) কিনোট বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশনের ডির্ভিশন প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। সম্মেলনে তিনি ন্যাসভ্যাক সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন করেন।
উত্তর পুর্ব ভারতের বৃহত্তম এই হেপাটোলজি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারলজি সম্মেলনটির যৌথ আয়োজক নর্থ ইস্ট গ্যাস্ট্রো ফাউন্ডেশন, গৌহাটি মেডিকেল কলেজের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ এবং ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির নর্থ ইস্ট চ্যাপ্টার।
উল্লেখ্য ন্যাসভ্যাক হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের চিকিৎসায় সর্বশেষ সংযোজন। এটি একটি থেরাপিউটিক ভ্যাকসিন যা হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় নতুন সম্ভবনার দুয়ার উন্মোচন করছে।
সম্প্রতি ফন্টিয়ারর্স ইন মেডিসিন নামক পৃথিবীর একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল জার্নালে ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা পাওয়া রোগীদেও চিকিৎসা শেষ হওয়ার পাচ বছর পরের ফলোআপ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে এসব রোগীরা ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা গ্রহন করার পাচ বছর পরও হেপাটাইটিস বি’র অন্যকোন ওষুধ গ্রহন না করেও সম্পুর্ন সুস্থ আছেন। ইতিপূর্বে ন্যাসভ্যাক দিয়ে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের দুই এবং বছরের ফলোআপ ডাটাও পৃথিবীর দুটি শীর্ষ জার্নাল প্যাথোজেন্স এবং ভ্যাকসিন্স-এ প্রকাশিত হয় এবং সেখানেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল।
উল্লেখ্য বর্তমানে হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় যে সমস্ত নিউক্লিওসাইড ও নিউক্লিওটাইড এনালগ ওষুধগুলো মুখে প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো বহু বছর ধরে টানা ব্যবহার করতে হয়, আর কোন কোন ক্ষেত্রে আজীবন। এরপরও কোন কোন রোগীর লিভার রোগ নিয়ন্ত্রনে আসে না আর যারা অনিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুকি যে শুধু অনেক বেশি তাই-ই নয়, বরং তাদের কারো কারো লিভার ফেইলিওরও ডেভলপ করতে পারে। অন্যদিকে ন্যাস্যভ্যাকের মাত্র দশটি ডোজ ছয় মাস ধরে ব্যবহার করে তাতেই এ ধরনের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি জাপানী বিশেষজ্ঞরাও সেদেশে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ ২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল হেপাটোলজি রিসার্চ নামের একটি শীর্ষস্থানীয় লিভার জার্নালে প্রকাশ করেছেন। দেখা যাচ্ছে ন্যাসভ্যাক নেয়া জাপানী রোগীদের প্রায় চল্লিশ শতাংশের এই চিকিৎসায় এইচ.বি.এস.এ.জি নেগেটিভ হয়ে গেছে এবং প্রায় সমসংখ্যক রোগীর প্রটেকটিভ এন্টিবডি ডেভলপ করেছে। হেপাটাইটিস বি’র প্রচলিত ওষুধগুলো ব্যবহারে এ ধরনের ফলাফল প্রায় অচিন্তনীয়।
ন্যাসভ্যাকের এই সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ন্যাসভ্যাক সম্বন্ধে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। আশা করা হচ্ছে বছর খানেকের মধ্যে ওষুধটি জাপানে অনুমোদন পেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে এই ওষুধটির হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় গেইম চেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারন নির্দিষ্ট মেয়াদে ওষুধ ব্যবহার করে যদি বেশিরভাগ হেপাটাইটিস বি’র রোগী আশ্বস্ত থাকতে পারেন যে তাদের লিভারটি ভালো থাকবে, পৃথিবীর কোটি কোটি হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত রোগীর জন্য এর চেয়ে ভালো খবর সম্ভবত আর কিছুই হতে পারে না।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে ন্যাসভ্যাকের ফেইজ ১,২ ও ৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের নেতৃত্বে সম্পাদিত হয়। ন্যাসভ্যাক উদ্ভাবনের জন্য অধ্যাপক স্বপ্নীল এবং জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর কয়েকজন জাপানী এবং কিউবান চিকিৎসাবিজ্ঞানী কিউবান একাডেমি অব সাইন্সেস থেকে ২০১৯ সালে প্রিমিও ন্যাশনাল পদক অর্জন করেন আর গত বছর বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেস অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীলকে প্রদান করে ‘বাস গোল্ড মেডেল এ্যাওয়ার্ড’।
অধ্যাপক ডা. স্বপ্নীল বলেন, ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংগঠন এসোসিয়েশন অব ফিজিশিয়ানস অব ইন্ডিয়ার এবারের সম্মেলনে ন্যাসভ্যাকের উপর বিশেষ লেকচারটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বাংলাদেশের এই সাম্প্রতিক অর্জনটির একটি বড় স্বীকৃতি।