বৃহস্পতিবার, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিমানের সামনে ড্রোন, আতঙ্কিত কর্তারা

ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ম অনুযায়ী, বিমানবন্দরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ-জুড়ে ড্রোন ওড়ানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই উড়ে চলেছে ড্রোন।

গত ছ’মাস নির্বিঘ্ন ছিল উড়ানের ওঠানামা। খানিকটা স্বস্তি পেয়েছিলেন বিমানবন্দরের কর্তারা।

কিন্তু, সেই নিশ্চিন্তির আকাশে কালো মেঘ ঘনিয়ে এল শনিবার রাতে। মুম্বই থেকে এসে কলকাতার মাটি ছোঁয়ার একটু আগে ভিস্তারার পাইলট জানালেন, সামনে ড্রোন।

নামার মুখে বিমানের গতি থাকে সবচেয়ে বেশি। পাইলটদের মতে, নামাটাই ঝুঁকির। সেই সময়ে সামনে ছোট পাখি চলে এলেও তার ধাক্কায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আর এ তো ড্রোন।

শনিবার সন্ধ্যায় প্রায় ন’টা নাগাদ ভিস্তারার পিছনেই ছিল ইন্ডিগোর উড়ান। ভিস্তারার পাইলটের বার্তা পেয়ে কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) যখন ইন্ডিগোর পাইলটের কাছে জানতে চায়, তিনিও বলেন ড্রোনের কথা। জয়পুর থেকে আসা ইন্ডিগোর পাইলট আরও জানান, ড্রোনে সাদা আলো জ্বলছে। সেটা প্রায় তিন নটিক্যাল মাইল (সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার) দূরে।

আশঙ্কার মেঘ ঘনায়। ইন্ডিগোর পিছনেই ছিল আগরতলা থেকে নামতে আসা এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান। মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হয় তার। উড়ানগুলি নামছিল মধ্যমগ্রামের দিক থেকে প্রধান রানওয়ে। সতর্ক এটিসি সেই দিক দিয়ে নামাওঠা বন্ধ করে দেয় তৎক্ষণাৎ। নামতে আসা অন্য উড়ানদের বলা হয়, রাজারহাটের দিক থেকে নামতে হবে। কলকাতা থেকে উড়তে প্রস্তুত উড়ানগুলিকে বলা হয়, প্রধান রানওয়ের রাজারহাটের দিক থেকে উড়তে।

কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা সি পট্টাভি রবিবার দুপুরে বলেন, ‘‘অনেক দিন বন্ধ ছিল। ছ’মাস আগে খুব কম সময়ের জন্য একটা ড্রোন দেখা গিয়েছিল। সে বারও পুলিশকে জানানো হয়, কিন্তু পুলিশ কিছু খুঁজে পায়নি। শনিবারের বিষয়টি সিরিয়াস। আমরা আবার পুলিশকে জানিয়েছি।’’

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ঠিক যেমনটা ভিস্তারার পাইলট জানিয়েছিলেন, যে প্রায় তিন নটিক্যাল মাইল দূরে মাটি থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতায় ড্রোনটা উড়ছিল, তেমনটাই পুলিশকে জানানো হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, জায়গাটা বারাসত, দত্তপুকুরের কাছাকাছি। পুলিশ খবর পেয়ে নিয়ম মাফিক বারাসত কন্ট্রোল থেকে শুরু করে আশপাশের থানা ও পুলিশ কন্ট্রোলকে শনিবার রাতেই সচকিত করে।

এক অফিসারের কথায়, যেখান থেকে ড্রোন ওড়ানো হচ্ছে, নির্দিষ্ট করে সেখানকার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ জানতে না পারলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কে কোথায়, বাড়ির ছাদ থেকে ড্রোন ওড়াচ্ছে তা বোঝা মুশকিল। তবুও সতর্ক করা হয়েছে আশপাশের এলাকার থানাগুলিকে।

ভারতের বিমান পরিবহণের নিয়ম অনুযায়ী, বিমানবন্দরের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ-জুড়ে ড্রোন ওড়ানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই উড়ে চলেছে ড্রোন। বিমানবন্দরের এক কর্তার কথায়, প্রায় বছর খানেক আগেও একবার এক পাইলট ড্রোনের কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সেটা ড্রোন ছিল নাকি কোনও বড় পাখি তা নিয়ে পরে ধোঁয়াশা দেখা যায়।

তবে শনিবার সন্ধ্যায় যে ড্রোনই দেখা গিয়েছে, তা নিয়ে নিশ্চিত বিমানবন্দরের কর্তারা। পুলিশের যুক্তি, পাড়ার অনুষ্ঠান, বিয়েবাড়িতে ইদানীং যে লেজ়ার আলোর ব্যবহার হয়, তা থেকে পাইলটদের সমস্যা হলে তাও খানিকটা খুঁজে বার করা যায়। কিন্তু, কোনও গোপন জায়গায় বসে রাতের আকাশে ড্রোন ওড়ালে তা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আনন্দবাজার পত্রিকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ