প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশীদের কাছে নালিশ করে কোনো লাভ হবে না। বরং গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে নালিশ করে কোনো লাভ হবেনা। আর বিদেশিদের কথায় দেশ চলবে না। আমরা প্রতিটি দেশের নির্বাচন দেখেছি।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সুষ্ঠুভাবে চলবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, সংসদকে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ৫০টি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সংসদে পাস হয়েছে।
চলতি অধিবেশনের শেষ দিনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনের নামে দেশে অগ্নিসংযোগের মতো তান্ডব চালানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্রের কড়া সমালোচনা করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) এখন বিদেশিদের কাছে নালিশ করছে যে, রাজনৈতিক কারণে তাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও পৃষ্ঠপোষকতা, অর্থায়ন এবং অগ্নিসংযোগের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা নৃশংস তান্ডব চালিয়ে কয়েকশ’ নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে এবং তাদের অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।
২০১৩-২০১৫ এবং ২০২৩ সালেল ২৩ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসের ওপর একটি ভিডিও ক্লিপ জাতীয় সংসদে প্রদর্শন করা হয়। যাতে তাদের বর্বরতা ফুটে ওঠে। ভিডিও ক্লিপ দেখানোর পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যা দেখানো হয়েছে তা খুবই নগণ্য। দিনের পর দিন তারা এটা করেছে। যারা এ ধরনের জঘন্য কাজের সাথে জড়িত তাদের ক্ষমা করা হবে না। তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাদের কাউকেই রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়নি। যারা এ সব কাজে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে, অর্থায়ন করেছে এবং এই ধরনের কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না।’ প্রধানমন্ত্রী আইন প্রণেতাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এবং অপরাধীরা যাতে তাদের অপকর্মের শাস্তি পায় তা নিশ্চিত করতে বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ইসরাইলিদের মতো হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ করে নারী-শিশুসহ মানুষ হত্যা করে আজরাইল হয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলায় এমনকি নারী ও শিশুও মারা গেছে।
তিনি বলেন, ‘একই চরিত্র… গাজায় যা ইসরায়েল করছে, বিএনপি এখানে (বাংলাদেশে তাই করছে)। বিএনপি বাংলাদেশের জন্য আজরাইল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির চরিত্রই হচ্ছে মানুষ হত্যা করা এবং দুর্নীতি করা।’
তিনি বলেন, বিএনপি কর্মীরা লন্ডন থেকে নির্দেশ পেয়ে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে মানুষ হত্যা করছে এবং হামলার ছবি লন্ডনে পাঠিয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন কী ধরনের নেতা? এবং কী ধরনের কর্মী তারা? কীভাবে তারা মানুষকে হত্যা করে?’
প্রধানমন্ত্রী এসকল নৈরাজ্যকর কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য জনগণের প্রতিও আহবান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না কারণ তারা জানে তারা জনসমর্থন পাবে না।
তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না কারণ তারা জানে যে তারা ভোট এবং জনসমর্থনও পাবে না। জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদেগরের এক মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে এ ধরনের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কোনো নির্বাচন হয়নি।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনের সবচেয়ে স্বীকৃত বিষয় হলো নির্বাচনে জনগণ বিশেষ করে নারী,নতুন ও তরুণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২৩৩টি আসন পেয়েছিল এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ৩০০টির মধ্যে ৩০টি আসন পেয়েছিল। তিনি বলেন, এরপর থেকে বিএনপি নির্বাচনকে এড়িয়ে আন্দোলন শুরু করে।
শেখ হাসিনা বলেন, জিএম কাদের দুই স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও তার ভাই এইচএম এরশাদের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পরিসংখ্যান দেখাননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সামরিক স্বৈরশাসক নির্বাচনে কারচুপির পথ দেখিয়েছিলেন, আরেকজন একই পথে হেটেছেন।
এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, তৎকালীন সরকার ভোটের বাক্স তালাবদ্ধ করে এবং ৪৮ ঘন্টা পর নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেছিল কারণ নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে জয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ।
তিনি বলেন, আমি খুশি হব যদি তিনি (জিএম কাদের) তার ভাইয়ে অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলের পরিসংখ্যানও দেখান।
বিএনপি সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের মতো ১৯৮৬ সালেল নির্বাচনও জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।
তিনি বলেন, ‘ভোট কারচুপির জন্য জনগণের আন্দোলনের মুখে খালেদাকে ক্ষমতাকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ এতগুলো আসন কীভাবে পেল তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার জনসমর্থন পেয়েছে কারণ এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এ দলটি যখনই ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের সেবা করে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে।
তিনি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, ‘ আমাদের একমাত্র ব্রত হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুত আমরা আমাদের পাঁচ বছরের মেয়াদে বাস্তবায়ন করব।;
আগামী জাতীয় বাজেটেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটবে বলে জানান তিনি।
তার নতুন মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যেই কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার দেশের কল্যাণে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে এবং চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনশীলতার পর্যায় রাখতে তারা দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তাঁর সরকার ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি’ অব্যাহত রাখবে বলেও প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা সরকারী স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।
এগুলি ছাড়াও, তিনি বলেন, তাঁরা যথার্থ ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী হওয়া নিশ্চিত করবে, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করবে, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদে নিয়োগ দেবে, রপ্তানি ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনবে, নতুন পণ্য উৎপাদন করবে, বাংলাদেশী পণ্যের জন্য নতুন রপ্তানি বাজার অনুসন্ধান করবে। কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও শিল্পের উন্নয়নে উৎসাহিত করা এবং চামড়া, পাটজাত পণ্য এবং অন্যান্য পণ্যের জন্য সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা নিশ্চিত করবে। যেমনটি এখন তৈরি পোশাক খাত ভোগ করে।