বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ায় হট্টগোল

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার কারণে কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে শেষ করতে বাধ্য হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে বক্তব্য দেন বীরমুক্তিযোদ্ধা বছির উদ্দিন। তিনি বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, ‘ইতিহাস মোছা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধুকেই আমরা মানি, জাতির পিতা হিসেবেই মানি। সেদিন যুদ্ধে জয় বাংলা ছাড়া অন্য কোনো স্লোগান কি ছিল? এই বাংলাদেশেই মুক্তিযোদ্ধা থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’

এর কিছুক্ষণ পর, মুক্তাগাছা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তার বক্তব্য শেষ করেও একই স্লোগান দেন।

এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা এনসিপি ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানালে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এবং হট্টগোল শুরু হয়। পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে উপজেলা প্রশাসন দ্রুত অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে সমাপ্তি ঘোষণা করে।

বছির উদ্দিনের বক্তব্য শেষে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুবসংগঠন জাতীয় যুবশক্তি ময়মনসিংহের সংগঠক আল মামুন, গণ অধিকার পরিষদের মুক্তাগাছা উপজেলার সভাপতি শাহীনুর আলমসহ আরও অন্তত ১৫-২০ জন। তাঁদের একটি অংশ মঞ্চে উঠে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগানে প্রতিবাদ জানাতে থাকলে সে সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কৃষ্ণ চন্দ্র অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বছির উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা বলি। বক্তব্য দিয়ে নামার পর জুলাই যোদ্ধারা প্রতিবাদ করেন। তাঁরা বলতে থাকেন, বঙ্গবন্ধুর নাম বলা যাবে না।’

জাতীয় যুবশক্তি ময়মনসিংহের সংগঠক আল মামুন বলেন, ‘তিনি শুরু থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু—এসব কথা বলে বক্তব্য দেন। এ সময় আমিসহ কয়েকজন প্রতিবাদ করি। সবাই যখন উত্তেজিত হয়ে যায়, তখন বিষয়টি অন্যভাবে চলে যায়। পরে অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে মুক্তিযোদ্ধাসহ সবাই চলে গেলে ঘণ্টাখানেক পর ইউএনও স্যারের কক্ষে আলোচনায় বসা হয়। আমরা মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান করি। এ পর্যন্ত আমরা কোনো মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে বেয়াদবি করিনি। আমাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের জায়গায়। এখন ফ্যাসিস্টদের বন্দনা পূর্বপরিকল্পিত। পরবর্তীতে এমন লোককে আর অনুষ্ঠানে ডাকা হবে না এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সভাপতি কৃষ্ণ চন্দ্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ছাত্র-জনতা আপত্তি জানায়, যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে তারা যেন আর কোনোদিন উপজেলা চত্বরে না আসে। পরে আমরা উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে অনুষ্ঠান দ্রুত সমাপ্ত করা হয়।’

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দুয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হয়েছিল। যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন তাদের বয়স ৯০-এর বেশি। এ ঘটনায় কোনও পক্ষই লিখিত অভিযোগ দেয়নি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ