রবিবার, ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিএনপি অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয় না : তারেক রহমান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি অন্যায়কারীকে কখনোই প্রশ্রয় দেয় না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটাই বিএনপির সবচেয়ে বড় পার্থক্য।’

সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নানা কাজের সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জনগণ সমর্থন করে না, বিএনপি এমন কাজ না করার নীতিতে চলে। তা সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর মধ্যে কিছু লোক হয়তো এমন কিছু কাজ করছে, যা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য না। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপিই একমাত্র দল, যারা অন্যায়কারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, এমন কাজ করলে কাউকে ছাড় দেয় না, অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দেয় না। কারণ বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হলো জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।’

বিএনপির বিরুদ্ধে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দয়া করে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না। অন্যায়ের ব্যাপারে বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে।’

শনিবার দুপুরে যশোর জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। এর আগে সকালে শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হয়।

জনগণের সমর্থনে দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে মাতৃভূমিকে পুনর্গঠন, রাষ্ট্রকাঠামোকে মেরামত করাই হবে বিএনপির প্রধান কাজ এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিএনপির প্রধান কাজ হলো, দল পুনর্গঠন করা, দলকে শক্তিশালী করা এবং জনগণের পাশে থাকা। দল ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়া।’

অতি দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ হলো একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দেওয়া। আমরা প্রত্যাশা করি, জরুরি কিছু সংস্কার কাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব তারা দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’

স্বৈরাচারী সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে গেছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘এখন আমরা সংস্কার প্রস্তাবের নামে বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিভিন্ন কথা বলতে শুনছি। ক্ষমতার ভারসাম্যের কথা শুনছি, অনেকে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের কথা বলছেন। অবশ্যই যে যার মত প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু যখন স্বৈরাচারী শাসক দীর্ঘসময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা জোর করে দখল করেছিল, তখন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। রাষ্ট্রের সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। তখন কারো মুখে সংস্কারের কথা শুনিনি।’

তিনি বলেন, বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এই সম্মেলনে আগত প্রায় সব কাউন্সিলরের নামে বহু মিথ্যা মামলা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিএনপি ও আরও কিছু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে লড়াই চালিয়ে গেছে। অসংখ্য নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো, স্বৈরাচারের পতন হবেই।’

তারেক রহমান অতীতে রাষ্ট্র পরিচালনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বিএনপির কাছে দেশ ও জনগণই প্রধান অগ্রাধিকার। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এ দল যে কয়বার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে, মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি। তবে জনগণের সমর্থন নিয়ে আবার রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে উৎপাদন বাড়ানো, শিক্ষা ব্যবস্থাকে দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলা, নারীদের ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগ দেবে যাতে চিকিৎসার জন্য মানুষকে বিদেশে যেতে না হয়।’

সকাল সাড়ে ১০টায় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান।

বক্তব্যকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দেশে শিগগিরই জাতীয় নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে।’

তিনি বলেন, সংকটকালে বিএনপি দেশের মানুষের পাশে থাকে। তাই বিএনপিকেই মানুষ সমর্থন দেয়।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির বিদায়ী আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে নির্বাচন করার কথা থাকলেও তিনি শেষ মুহূর্তে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

বিদায়ী বক্তব্যে অধ্যাপক নার্গিস বলেন, ‘সামনে নতুন নেতৃত্ব আসবে। তাদের নেতৃত্বে দল আরও শক্তিশালী হবে। আমি তাদের সাফল্য কামনা করি। বিএনপির দুর্দিনে ছিলাম, আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন জেলা বিএনপির বিদায়ী যুগ্ম-আহ্বায়ক ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন।

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়ে যায়নি। আসুন, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করি।’ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ যশোরের শতাধিক পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়। স্ব-স্ব উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা শহীদ পরিবারগুলোর পক্ষে এই উপহার গ্রহণ করেন।

বেলা ২টায় যশোর ইনস্টিটিউটের আলমগীর সিদ্দিকী হলে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণ শুরু হয়। সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সভাপতির একটি পদে তিনজন এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদে চার নেতা প্রার্থী হয়েছেন। পাঁচ সদস্যের কমিটি নির্বাচন পরিচালনা করছে। রাতে ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ