শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপি চাষ করে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন জেলার কালাই উপজেলার বহুতি দরগাপাড়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক।
জয়পুরহাটের কালাইয়ে শীতকালীন সবজি বিশেষ করে ফুলকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর শীত মৌসুমে ফুলকপির চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উপজেলার বহুতি-দরগাপাড়া গ্রামের কৃষক এনামুল হক।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বায়ারের হাইব্রিড জাতের ফুলকপি চাষে তিনি কোন ক্ষতিকর কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেনি। জৈব্যবালাই নাশক ও কেঁচো সার ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করেছেন। কম সময়ে, অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে অধিক মুনাফার আশা নিয়ে এ কপি চাষ করে তিনি এখন সফলতার স্বপ্ন বুনছেন।
এজাতের ফুলকপি বাজারে কদর বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান বাজারে চাহিদা অনেকটা ভালো এবং দামও অনেক বেশি পাচ্ছেন। এনামুলের ফুলকপি চাষে সফলতা দেখে স্থানীয় অনেক কৃষকরাই আগামীতে ফুলকপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ধান, আলুর চেয়ে ফুলকপি চাষে সময়, খরচ ও শ্রম কম লাগে। তাই অন্যান্য ফসলের বদলে ফুলকপি চাষ করবেন বলে জানান প্রতিবেশী কৃষকরা। সফল চাষি এনামুল হকের ৬০ শতক জমিতে যেন বর্তমানে ফুলকপির রাজ্য।
একেকটি ফুলকপির ওজন ১ থেকে ২ কেজি। নিজের ফুলকপি ক্ষেতে মনোযোগ দিয়ে পরিচর্যা করছেন এনামুল। তিনি জানান, চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বাবার অভাবের সংসার, তাই লেখাপড়া করা হয়নি। তিনি স্থানীয় আলুর কোল্ড স্টোর লেবারি কাজ করতেন। কাজ পেলে খাবার জুটত, না পেলে অনাহারে থাকতে হতো। তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন কিছু করবেন। তার এলাকাতে অনেক ভালো সবজি চাষ হচ্ছে।
এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি সবজি চাষ শুরু করেন করেন। তাই ২০১২ সালে তার কাছে কিছু জমানো টাকা ও ধার-দেনায় প্রথমে ৯ শতক জমি বর্গা নিয়ে চিচিংগা চাষ করেন। সেই সময় তিনি সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি জমি বর্গা নিয়ে সারা বছর নানা সবজি চাষ শুরু করেন। আর এভাবে একপর্যায়ে চাষের জমি বাড়ে, আয় বাড়ে।
দিনমজুর থেকে এনামুল হক এলাকায় হয়ে ওঠেন সফল সবজি চাষি। ৩০ শতক জমি কিনে তৈরি করেছেন টিনের একটি বাড়ি। ঘোয়ালে আছে তিনটি বিদেশী গরু। আছে একটি পুকুর। তাঁর দুই ছেলে, বড় ছেলে খোকন ও ছোট ছেলে আব্দুল্লাহ। বড় ছেরে স্কুলে পড়ছে। স্ত্রী আনজুয়ারা বেগম আর এনামুল হক লেগে থাকেন সবজি চাষে।
এবার তিনি ৬০শতক জমি বর্গা নিয়ে বায়ারের হাইব্রিড ৫৩ ও ৪০ জাতের ফুলকপির চারা রোপণ করেন। এই ফুলকপি চাষে তিনি কোন ক্ষতিকর কীটনাশক বা রাসায়নিক সার না দিয়ে জৈব্যবালাই নাশক এবং কেঁচো সার ব্যবহার করে ফুলকপি চাষ করেছেন। অল্প পরিশ্রমে ও স্বল্প খরচে রোপোনের ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যেই এ ফুলকপি বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই । তার জমিতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কপি রয়েছে। পাইকারি দরে এই পর্যন্ত ৯৫ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছেন। আরো ৩ হাজার পিস ফুলকপি বিক্রি করা যাবে।
আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এগুলো সব বিক্রি হয়ে যাবে। তার এ ফুলকপির উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন সকল খরচ বাদ দিয়ে মুনাফা হবে প্রায় দেড় লাখ টাকা।
উপজেলার বহুতি-দরগাপাড়া গ্রামের কৃষক হাফিজার ও জালাল মিয়া জানান, ধান, আলু ও ভুট্টার চেয়ে ফুলকপি চাষে খরচ ও শ্রম দুটোই কম । এসব ফসল চাষে খরচের পাশাপাশি রোগ বালাইয়ের আক্রমণের আশঙ্কাও কম। তাই অন্যান্য ফসলের বদলে আগামীতে ফুলকপি চাষে করবেন বলে জানান তারা।
এনামুল হক ফুলকপি চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেরেছেন। তাই অন্য ফসলের তুলনায় ফুলকপি চাষে অধিক লাভের স্বপ্ন বুনছেন তিনি। কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় বলেন, এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ উপজেলায় এবার শীতকালীন ১০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ অঞ্চলের মানুষ আধুনিক সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। চাষিরা শীতকালীন ফুলকপি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তারা ফুলকপি চাষ করে দাম ও ফলন দুটোই ভালো পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।