র্যাবের হেফাজতে থাকা রুমার সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে পার্বত্য জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে র্যাবের হেফাজতে থাকা নেজাম উদ্দিনকে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে হাজির করা হয় । পরে তাকে নিরাপদে উদ্ধার করতে পারায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নেজাম উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এসময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, লে.কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেনসহ র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
খন্দকার আল মঈন জানান, ২ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শতাধিক কুকি-চীন সদস্য তাদের নিজস্ব পোশাক পরে বান্দরবানের রুমা সোনালী ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) থেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে অতর্কিত হামলা করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য লোকদের জিম্মি করে ফেলে। এ সময় সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের চারটি শটগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ লুট করে। সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা এবং টাকা না পেয়ে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
আল মঈন বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই গুরুত বিবেচনা নিয়ে র্যাবের একাধিক আভিযানিক দল কাজ শুরু করে। অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার ও অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারের লক্ষ্যে গোযয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও তথ্য সংগ্রহসহ র্যাবের আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় একপর্যায়ে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ম্যানেজারের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কৌশলে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের ফলে ম্যানেজারকে তার পরিবারের কাছে হস্থান্তর করতে সম্মত হয়। ম্যানেজারকে পরিবারের কাছে হস্থান্তর করার সময় যেন পরিবারের অন্য সদস্যরা অপহরণের শিকার না হয় সে লক্ষ্যে র্যাব সু-কৌশলে হস্থান্তর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সাদা পোশাকধারী চৌকস একটি দল রুমা থানার বেথেল পাড়া এবং বড়ুয়া পাড়ার আশেপাশে অবস্থান নেয়।
পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসীরা ম্যানেজারকে পরিবারে কাছে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়। পরে র্যাব সদস্যরা ম্যানেজার ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তা দিয়ে র্যাব-১৫ এর বান্দরবান ক্যাম্পে নিয়ে আসে। হয়নি। সন্ত্রাসীরা থেমে থাকবে না, তাদের এ ধরনের আরও পরিকল্পনা থাকতে পারে।
র্যায পরিচালক বলেন, “তারা বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের আমরা সম্মান করি। এ কারণে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে শান্তি আলোচনা (পিচ টক) চালু ছিল। এর মধ্যেই তারা এ ধরনের কার্যকলাপ করছে। তারা আরো নাশকতার চেষ্ট করতে পারে।”
ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তারা মুক্তিপণ চেয়েছে এমন কথা কয়েকদিন যাবত চাওড় হয়েছে। তবে র্যাব কিছু কৌশল অবলম্বন করেছে। এখানে কোন অর্থ লেনদেন হয়নি। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গত দুইদিন অভিযান চপলছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন সহায়তা নেয়া হয়েছে। কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করেছি এবং জীবিত পেয়েছি। অভিযান চলমান রয়েছে।
কমান্ডার মঈন বলেন, ব্যাংকের ভল্টে বিপুল টাকা আছে, এমন মনে করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। ব্যাংকে দায়িত্বরত পুলিশের অস্ত্র লুট করে। এ সময় শতাধিক কুকি চীন সদস্য হামলা চালায়। নেজাম উদ্দিনকে তারা সনাক্ত করেছে, তবে তার বিচক্ষণতার কারণে ব্যাংকের টাকা নিতে পারেনি। এক কোটি টাকা দেয়ার জন্য তারা ব্যাংক ম্যানেজারকে হুমকি দিয়েছিল। তবে ব্যাংকের ভল্টের চাবি দেননি বলে তাকে তারা অপহরণ করে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব পরিচালক বলেন, “কেএনএফ শুধু ব্যাংকে হামলা চালিয়েছে তা নয়। তারা বেশকিছু হামলা চালিয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি সবাইকে নিয়ে অভিযানের পরিকল্পনা করছি। কেএনএফ সদস্যরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত, র্যাবই প্রথম তা উন্মোচন করে। জঙ্গিদের অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ. আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ দেয়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি বিনষ্ট করাসহ বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিল। সেনাবাহিনী ও র্যাব সর্বশক্তি নিয়োগ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেড়ে উঠা জামাতুল আল ফিন্দাল শ^ারকীয়ার সব সদস্যকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।”
তিনি বলেন, তাদের প্রশিক্ষণদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। আমাদের অব্যহত অভিযানে তারা অনেকটা কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে পুনরায় আগের মতই শান্তি শৃঙ্খলা বিরাজ করছিল। এখানে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি কাজ করছিল আর তখনই তারা পুনরায় রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জনগণের কাছে নিজেদের উন্মোচিত করেছে।