বৃহস্পতিবার, ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দেওয়ানগঞ্জের জিল বাংলা চিনিকল টানছে লোকসানের ঘানী

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা চিনিকল লোকসানের ঘানী টানছে বহু বছর ধরে। ২০২১ সালের জুন মাস নাগাদ জিল বাংলা চিনিকলটিতে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ ছিল। পুঞ্জীভূত ঋণের সুদসহ বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৭০৬ কোটি ২ লাখ টাকায়।

ঋণের বিপরীতে শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জুন মাসে সুদ দিতে হয়েছে ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তিন বছরের সুদের গড় হিসেব করলে দেখা যায়, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের জুন মাসে ৮৪ কোটি এক লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছে। যার কারণে প্রতি অর্থ বছরে মিলটির লোকসানের বোঝা বেড়েই চলেছে।

জিল বাংলা চিনিকল লিমিটেড উৎকৃষ্ট মানের চিনি উৎপাদনকারী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাজারে এই মিলের উৎপাদিত চিনির ব্যাপক চাহিদা। দেশের অন্যান্য মিলগুলোর তুলনায় জিল বাংলা চিনিকলে চিনি উৎপাদনের হার সর্বাধিক। বিগত পাঁচ বছরের তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২০-২১ মৌসুমে ৬.৬৪, ২০২১-২২ মৌসুমে ৭, ২০২২-২৩ মৌসুমে ৬.৬১, ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৬.০৪ এবং সর্বশেষ ২০২৪-২৫এ আখ মাড়াই মৌসুমে মিলটির চিনি উৎপাদনের হার ছিল ৬.৩৮ শতাংশ। এরপরও প্রতি অর্থ বছরে চিনিকলটিকে গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ লোকসান। কর্তৃপক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ঋণের সুদ দিতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে মিলটিকে।

জিল বাংলা সুগার মিল দেওয়ানগঞ্জ ।

জিল বাংলা চিনিকল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) শরিফ মো. জিয়াউল হক জানান, ২০২১ সালের জুন মাস নাগাদ মিলটিতে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ ছিল। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকের ২১৬ কোটি এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের ২৩৪ কোটি টাকা। বর্তমানে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭০৬ কোটি দুই লাখ টাকায়। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের ২৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য খাতে ১৮৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের কাছে ২৪৪ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। এর বিপরীতে গত ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ ২৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, ২০২৪ সালের জুন মাস নাগাদ ২৬ কোটি আট লাখ টাকা এবং ২০২৫ সালের জুন মাস নাগাদ ৩২ কোটি ৩০ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছে। সুদ মওকুফ করা হলে মিলটির লোকসান ৭০ শতক কমে আসবে বলে জানান তিনি।

গত পাঁচ বছরের আখ মাড়াই, চিনি উৎপাদন ও লাভ-লোকসানের রেকর্ড অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০-২১ মৌসুমে ৭২ দিনে ৫৮ হাজার ৯৫১ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে তিন হাজার ৯০৮ দশমিক ৫০ টন চিনি। ওই মৌসুমে লোকসান ৬৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৪ দিনে ৩৫ হাজার ৬৯৮ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে দুই হাজার ৪৯৮ টন। ওই মৌসুমে লোকসান ৫২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ মৌসুমে ৪১ দিনে ৩৫ হাজার ১৭১ দশমিক ৬৬ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ২ হাজার ৩২২ টন। ওই মৌসুমে লোকসান ৫৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৫২ দিনে ৪৪ হাজার ৯৮৮ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে দুই হাজার ৭১৭ টন। ওই মৌসুমে লোকসান ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ মাড়াই মৌসুমে ৮৩ দিনে ৭২ হাজার ৭৯ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে চার হাজার ৫৯৯টন। ওই মৌসুমে লোকসান ৪৭ কোটি ২০ লাখ টাকা।

জিল বাংলা চিনিকল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি একেএম রায়হানুল আজীম ইমরান বলেন, ঋণের সুদ দিতে গিয়ে প্রতি অর্থবছরে বাড়তি লোকসানের মুখে পড়ছে মিলটি। এ অবস্থায় স্বল্প মূলধনের নতুন ‘প্রজেক্ট বাই প্রোডাক্ট’ উৎপাদন করতে পারলে মিলটি লাভবান হবে। ঋণের সুদ মওকুফ করে স্বল্পমূল্যের প্রজেক্ট বাই প্রোডাক্ট উৎপাদনের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

জিল বাংলা চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মো. কাওছার আলী সরকার বলেন, দেশের অন্যান্য চিনিকলের তুলনায় জিল বাংলা চিনিকলে চিনি আহরণের হার সর্বাধিক। এরপরও ঋণের কারণে মিলটিকে প্রতিবছর লোকসান দিতে হচ্ছে। সুদ মওকুফ করে মিলটিতে শিল্পের বহুমুখী ব্যবহার করা হলে মিলটি লাভজনক শিল্পে রূপান্তরিত হবে। সুদ মওকুফের দাবি তার।

জিল বাংলা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তরিকুল আলম জানান, জিল বাংলা চিনি কল লিমিটেড বাংলাদেশের সর্বপেক্ষা উৎকৃষ্টমানের চিনি উৎপাদনকরী প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র পুঞ্জীভূত ঋণের কারণে মিলটিকে প্রতিবছর লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে। পুঞ্জীভূত ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সদর দপ্তরে জানিয়েছেন বিগত এমডি। সরকার সদয় হয়ে ঋণের সুদ মওকুফ করলে মিলটির লোকসান কমে আসবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ