শনিবার, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জনগণ নির্বিঘ্নে ভোট দেবে : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি যেন কোনো অশুভ পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার ভোগ করবে।

আজ শনিবার সিভিল এভিয়েশন মাঠ কাওলায় মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এদেশে যে কোনো মূল্যে নির্বাচন হবে এবং জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোট দেবে।”

তিনি বলেন, আপনারা আমার এই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন যে উন্নয়ন চাইলে নৌকা মার্কা। ধ্বংস চাইলে ঐ বিএনপি-জামায়াত এরা। কাজেই, সেইদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি নৌকা মার্কায় ভোট দিন। আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই কথা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছি কাজেই ভোট দিলে আছি না দিলে নাই। কিন্তু, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। আমরা চাই নৌকা মার্কায় ভোট দিন। যাতে আবারো আপনাদের সেবা করতে পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, যেভাবে হোক নির্বাচন এদেশে হবেই এবং জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে।
তিনি বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সেটা একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে। তাই, আপনাদের কাছে আমার এটাই আবেদন থাকবে সামনে নির্বাচন। আমি জানি বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না তা নিয়ে তারা দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে।’

এটাই স্বাভাবিক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, তারা যে নির্বাচন করবে তাদের নেতাটা কে? তারা যে নির্বাচন করবে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? ঐ দুর্নীতিবাজ পলাতক আসামী! না এতিমের অর্থ আত্মসাতকারি!

“এজন্য তাদের চেষ্টা নির্বাচন বানচাল করার। নির্বাচন হলেই তারা জানে নৌকা মার্কা ভোট পাবে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। দেশের উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে। তাই, তারা নির্বাচনকে নষ্ট করতে চায়। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিতে চায়। কাজেই এটা যেন করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। আর বিশেষকরে ঢাকাবাসী আপনাদেরকেও আমি সতর্ক করে দিচ্ছি,” যোগ করেন তিনি।

তিনি এ সময় নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য সমবেত জনতার অঙ্গীকার চাইলে সকলে দুই হাত তুলে সমম্বরে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, শুধু নিজে ভোট দিলে হবে না পরিবার, বন্ধু-বন্ধব, দেশে-বিদেশে সকলের কাছে প্রচার করতে হবে। প্রচার করতে হবে যে এইদেশের উন্নয়নের জন্য একমাত্র আওয়ামী লীগই রয়েছে। তারাই একমাত্র এদেশের উন্নয়ন করতে পারে, গণতন্ত্র দিতে পারে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন।

আরো বক্তৃতা করেন, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্পচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ঢাকা সিটি উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসান, আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কোচির পরিচালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে টার্মিনাল উদ্বোধনের দিনে গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় এই সমাবেশটি দুর্যোগাপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য পিছিয়ে দিয়ে এদিন অনুষ্ঠিত হয়। প্রখর সূর্যের তাপ উপেক্ষা করে সকাল থেকেই নানা রংয়ের পোশাক পরে স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করে দলে দলে উৎফুল্ল নেতা-কর্মী এবং সাধারণ জনগণ সমাবেশে যোগ দেন এবং বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র এলাকাটি জনসমুদ্রে রূপ লাভ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের ঢাকার বদলে যাওয়া, আজকে বাংলাদেশ বদলে গেছে, যানজট দূর করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ইতোমধ্যে মেট্রোরেল চালু হয়েছে। এই মেট্রোরেল এরপর ধাপে ধাপে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেলষ্টেশন পর্যন্ত যাবে। মেট্রোরেলের সঙ্গে পাতাল রেলও যাতে হয় সে প্রকল্পের কাজও চালু হয়েছে। বিদ্যুৎ নিরাপত্তার জন্য পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সেই সাথে ঢাকায় সার্কুলার ওয়াটার ওয়েজ নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। এমনকি আগামীতে পুরো ঢাকাকে ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। কিন্তু এজন্য কোন জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন পড়বে না।

’৯৬ সালে সরকার গঠন করে যমুনা নদীর ওপর রেল সংযোগসহ বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এরফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তাঁর সরকার জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে পুঁজি করে আজকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। এখন পদ্মা নদীর উপর দিয়ে গাড়ি ও রেল দুটোই যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে এখানে দুর্নীতি হয়েছে বলে বিশ^ব্যাংক যে অপবাদ দিয়েছিল তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সরকার নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণ করেছে এবং কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে বিশ্বব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা। কেননা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি নয়, মানুষের সেবা করতেই ক্ষমতায় এসেছে। আর নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে, সমুদ্র বন্দরগুলো করা হয়েছে। মহেশখালীতে ‘ডিপ সি’ পোর্ট হয়েছে এখন কতৃর্পক্ষ গঠন করে পুনরোদমে চালু করা হবে।

রাজধানীর ফ্লাইওভারগুলো নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, বনানী ওভারপাস, কালশি ফ্লাইওভার এবং আরো নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে যাচ্ছি। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত মাস র‌্যাপিড ট্রানজিটও প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

আগামীতে ক্ষমতায় আসতে পারলে ঢাকা উত্তর এলাকার যে সব জায়গায় রেল ক্রসিং রয়েছে সেগুলোতেও ওভারপাস করে দেবে আওয়ামী লীগ সরকার, যাতে রেলের জন্য আটকে থাকতে না হয়। কেননা, সকলের সুযোগ-সুবিধা দেখাটাই আমাদের দায়িত্ব, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কা, এই মার্কা ক্ষমতায় থাকলেই সব হবে। আর ঐ লুটেরা দুর্নীতিবাজ, খুনী, ডাকাত, চোর- এরা ক্ষমতায় আসলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ এই দেশকে এরা যেন ধ্বংস করতে না পারে।

তিনি বিএনপি’র প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, তারা বিদেশে এখানে সেখানে ধর্না দেয়। ঐসব ধর্না দিয়ে কোন কাজ হবে না। জনগণের শক্তি বড় শক্তি। আমি সেই জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাস করি। তাদের ওপরই আমার আস্থা আছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ