গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকে থাকার পর এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিফটে ৪৫ মিনিট ধরে আটকে থাকায় মৃতের স্বজনরা এই ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবি করেছেন। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ করেন স্বজনরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এমনটি হতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মৃতের স্বামী শারফুদ্দিন সহ স্বজনরা জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা রানীগঞ্জ বাড়িগাও গ্রামের শারফুদ্দিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৫৩) দুদিন ধরে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। রোববার সকালে তাকে নেয়া হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। প্রথমে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায় তার হার্টে সমস্যার কথা। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে সকাল সাড়ে নয়টায় ১১ তালা থেকে থেকে লিফটে ৪ তলার হৃদরোগ বিভাগে নেয়া হচ্ছিল মমতাজ বেগমকে। এক পর্যায়ে লিফটে উঠলে ৯ তলার মাঝামাঝি গিয়ে লিফট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়৷
স্বজনদের অভিযোগ, লিফটে রোগীর স্বজনসহ ১৬/১৭ লোকজন ছিল। এসময় লিফটে থাকা মোবাইল নাম্বারে ৩ জন লিফটম্যানকে ফোন দেয়া হয় কিন্তু তারা গাফিলতি করেন। ফোনে তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। পরে ৯৯৯ কল করলে লেফট বন্ধ হওয়ার ৪৫ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু এরই মধ্যে মমতাজ বেগম মারা যান। মৃতের স্বজনরা বলছেন, লিফট ম্যান বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা না থাকলে তিনি হয়তো মারা যেতেন না। তারা এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেই দাবি তুলেছেন তারা।
নিহতের মেয়ে শারমিন বলেন, আমার মা সকালে অসুস্থ হয়ে যায়। পরে সকাল ৬ টায় তাজউদ্দীন হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রথমে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায় হার্টে সমস্যা বলে জানান। পরে ১১ তালা থেকে থেকে লিফটে ৪ তলার হৃদরোগ বিভাগে নেয়ার কথা বলে। তাদের কথামতো লিফটে উঠলে ৯ তলার মাঝামাঝি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়৷ এসময় আমি, আমার মামা, ভাইসহ কয়েকজন মাকে নিয়ে ভেতরে ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
নিহতের ভাগ্নে খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম জানান, তার মামী মমতাজ বেগম শ্বাস কষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। পরে তাকে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে একই ভবনের ৪র্থ তলায় থাকা কার্ডিলজি বিভাগে স্থানান্তর করেন। মামী হাঁটা চলা করতে পারলেও তখন তাকে দ্রুত হৃদরোগ বিভাগে নেয়ার জন্য ট্রলিতে উঠানো হয়। পরে মমতাজ বেগম, তার ছেলে আব্দুল মান্নান ও মেয়ে শারমিনসহ আমরা হাসপাতালের ৩ নং লিফটে উঠি। কিন্তু লিফটি হাসপাতালের ৯ম ও ১০ তলা মাঝমাঝি থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লিফটি হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। তখন আমি লিফটে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যাক্তিকে বার বার ফোন করলেও তারা কোন কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু বার বার ফোন করায় তারা বিরক্ত হয়ে দুর্ব্যবহার করেন। এঅবস্থায় রোগী ছটফট করতে থাকলে আবারও অপারেটরদের ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। আটকে থাকার ৪৫ মিনিট পর এক পর্যায়ে কয়েকজন অপারেটর গিয়ে দরজা কিছুটা ফাঁক করে আবার দরজা বন্ধ করে তারা চলে যায়। এসময় অনেক কষ্টে আমরা তিনজন বেরিয়ে আসতে পারলেও মমতাজ বেগমকে বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল যায়। কিন্তু ততক্ষণে লিফটের ভেতরই মমতাজ বেগম শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা দরজা খুলে মমতাজ বেগমের লাশ উদ্ধার করেছে। যদি সঠিক সময়ে তাকে উদ্ধার করা হতো তা হলে হয়তো তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হতো।
এ ব্যাপারে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সকালে মমতাজ বেগমকে বুকে ব্যাথা অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে মেডিসিন বিভাগ হতে ৪ তলায় নেয়ার জন্য লিফটে তোলা হয়। এ সময় লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে দীর্ঘ সময় লিফট আটকে থাকে। পরে লিফটম্যান ও ফায়ার সার্ভিসের লোক এসে সবাইকে উদ্ধার করে। লিফটে আটকে থাকা সবাই সুস্থ ছিল কিন্তু মমতাজ বেগম মারা গেছেন।
পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা: রুবিনা ইয়াসমিন কে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৩ মে শুক্রবার হাসপাতালের ১২ তলার নামাজের কক্ষের দেয়ালের পাশের ফাঁকা স্থান দিয়ে নিচে ১০তলায় পড়ে গিয়ে হাসপাতালে চিকিসাধীন জিল্লুর রহমান নামে এক রোগীর মৃত্যু