সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষ পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিচ্ছেন শিক্ষকরা

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষ গেস্ট হাউজ বানিয়ে পর্যটকদের কাছে নিয়মিত ভাড়া দিচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর সেই গেস্ট হাউজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুয়াকাটা বি.বি গেস্ট হাউজ’। দীর্ঘদিন যাবত এমন অবস্থা চললেও জানে না উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগ এমনটাই দাবি তাদের।

জানা যায়, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বাবদ প্রকারভেদে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে। অর্ধ বার্ষিক ও বার্ষিক পরিক্ষার সময় নেয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে। বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, মসজিদ চাঁদা, কোচিং ফি, বেতন সহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে এসব টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হলেও এর কোন সঠিক হিসাব নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে এসব টাকা তা জানেন না স্কুল পরিচালনা কমিটি। এরপরও গত কয়েক বছর ধরে নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বিদ্যালয়ের দু’টি ভবনের একটিকে গেস্ট হাউজ বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়াও হচ্ছে নিয়মিত। তবে এ গেস্ট হাউজের ভাড়া কোথায় যাচ্ছে কিংবা কে কি খাতে ব্যয় করছেন এর সঠিক কোনো হিসাব নেই।

বিষয়টি নিয়ে রোববার (৯ জুলাই) রাতে কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কাওছার ও পৌর কৃষকলীগের নেতা তুহিন দেওয়ান তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন। এরপর সোমবার সকালে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান এবং তাৎক্ষণিক তিনি বিবি গেস্ট হাউসের সাইনবোর্ড খুলে ফেলেন। রুমে থাকা খাট, ফার্নিচার অপসারণ করে ওই গেস্ট হাউস বন্ধ করে দেন।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছর আগে বঙ্গবন্ধু বিদ্যালয়ের একটি টিন শেড ভবনে প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান নার্সারি স্কুল খোলেন। পরে অভিভাবক ও স্থানীয়দের চাপের মুখে গত দুই বছর হলো বন্ধ করা হয় ওই নার্সারি স্কুলটি।

এদিকে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জেলে ও দিন মজুর শ্রেণির। এসব অভিভাবকরা স্কুলের ধার্যকৃত অতিরিক্ত ফি দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অভিভাবক জানান, এই স্কুলে লেখাপড়ার খরচ প্রাইভেট স্কুলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাদের অভিযোগ স্কুলটি এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে।

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মূলত বিভিন্ন সময় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তারা কুয়াকাটায় আসেন, তাদের জন্য অনেক সময় রুম পাওয়া যায় না। তাই গেস্ট হাউজ হিসেবে কয়েকটি রুম করা হয়েছে। এগুলো কখনো সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হয় না।

তার দাবি, বিদ্যালয়টির মোট চারটি কক্ষকে গেস্ট হাউজ বানানো হয়েছে। যার দু’টি কক্ষের একটিতে গণিত শিক্ষক এবং একটিতে ইংরেজি শিক্ষক নিয়মিত থাকছেন এবং দুটি কক্ষ অতিথিরা এলে থাকেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি গতকাল জানতে পেরেছি। সোমবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে বিবি গেস্ট হাউস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ