পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর সংযোগ খাল খ্যাত স্বনির্ভর খালের স্লুইজগেট দখল করে লবন পানি উঠিয়ে প্রভাবশালীদের মাছ চাষের দরুন কৃষকের কয়েকশ’ একর জমির আউশ ধানের বীজতলা লবন পানিতে ডুবে গেছে। এতে আউশ ধানের আবাদে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছেন কৃষক।
স্থানীয় কৃষকের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে। এ সুযোগে মাছ শিকার করতে মৌসুমের শুরু থেকেই বালিয়াতলী ইউনিয়নের কানকুনীপাড়া, মধুখালী, হারিপাড়া, বৌদ্ধপাড়া, আইউমপাড়া এলাকার স্লুইসগেট দখল করে চাবি নিয়ে নেয় বালীয়াতলী ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সোহেল। তিনি কৃষকের স্বার্থে নয় স্লুইসগেট দিয়ে পানি ওঠা নামা করছেন তার মাছ চাষের স্বার্থে।
জানা যায়, উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর শাখা স্বনির্ভরখাল বা জিয়ার খাল মিঠাগঞ্জ ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ৮ কিলোমিটার প্রবাহমান। এ খালের স্লুইজগেট গুলো প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষের জন্য লবন পানি ওঠা নামা করানোর ফলে কৃষকের চাষাবাদের জমিতে মিষ্টি পানির অভাব দেখা দিয়েছে।
আউশের ধান চাষ নিয়েও ১০টি গ্রামের কৃষক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। লবন
পানিতে মাঠ তলিয়ে যাওয়ার কারনে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট ও আউশের বীজতলা নষ্ট
হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এমনকি এসব গ্রামের মানুষের রান্না, গোসল সহ গেরস্থালি কাজে মিষ্টি পানির সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজি নষ্ট হতে চলছে। বর্তমানে খালটিতে লবন পানি বিরাজ করছে।
বালিয়াতলী ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সোহেল জানান,’আমার কাছে
স্লুইসগেটের চাবি আছে। স্লুইসগেটটি আমি নিজেই দেখাশুনা করি। লবন পানি কখনও উঠাইনি। কৃষকের যাতে সুবিধা হয় তা আমি করি যাচ্ছি।’
বালিয়াতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য এনামুল মিয়া বলেন, আমি নিজে কয়েকবার মোবাইল ফোন দিয়ে বলেছি যাতে লবন পানি না ওঠায়। কিন্তু সোহেল কারও কথা শুনছেন না।
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য আবু হাশেম বলেন, আমার তিনকানির বেশি জমি রয়েছে এ বিলে। এখন আমি আউশের বীজ করছি। লবন পানি সব শেষ করে দিতে আছে। শ্রমিকলীগের সোহেল কারও কথা শুনছেন না। নিজেদের সুবিধামতো লবণ পানি ওঠা-নামা করাচ্ছেন। লবন পানির জন্য হাঁস মুরগিও রোগে ভুগতে শুরু করেছে। আমি একজন জনপ্রতিনিধি, অথচ কৃষকের স্বার্থে কিছুই করতে পারছিনা।
বালিয়াতলী ইউপি চেয়ারম্যান এ বিএম হুমায়ুন কবির জানান, কৃষকের চাষাবাদের
সময় লবন পানি ওঠানোর কোন সুযোগ নাই। স্বনির্ভর খালটি মিঠাগঞ্জ ও বালিয়াতলী ইউনিয়নের কৃষকের মিষ্টি পানির চাহিদা পূরন করে। কারা লবন পানি উঠায় তা জেনে ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ জানান, কৃষকের স্বার্থে কৃষি অফিস সব সহযোগিতা করবে। কিন্তু স্লুইসগেট নিয়ন্ত্রন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। লবন পানি এখন ওঠালে কৃষকের ক্ষতি হবে। সব জায়গায় বীজতলা তৈরি করার সময় এসেছে।
কলাপাড়া নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কৃষকরা আমার কাছে এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা গ্রহন করবো।